মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ করল সংসদের এথিক্স কমিটি। এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ছিল না। বিজেপির বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে আগেই তার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল। ৯ নভেম্বর বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলই এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত হয়ে বেরিয়ে এল, যদিও চূড়ান্ত সিলমোহর দেবেন স্পিকার। মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ৫০০ পাতার রিপোর্ট পেশ করে এথিক্স কমিটি সাংসদ পদ খারিজের পাশাপাশি সরকারি তদন্তেরও সুপারিশ করেছে। যার অর্থ হল, সাংসদের বিরুদ্ধে সিবিআই বা ইডি তদন্ত। এথিক্স কমিটির বৈঠকে সেই সুপারিশ ৬-৪ ভোটে পাশ হয়ে যায়। এসব হয়েছে রাজনৈতিক পাটিগণিত মেনে। এথিক্স কমিটিতে বিজেপির সাংসদরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তার সঙ্গে এই সুপারিশের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ফেব্রুয়ারি মাসে পার্টির দ্বারা সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া কংগ্রেস সাংসদ প্রণীত কৌর। এছাড়া কংগ্রেসের একজন সদস্য তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ায় উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি অসম্মতি জানিয়ে নোট পাঠান।

মহুয়া আগেই অভিযোগ করেছিলেন, ইচ্ছা করেই ৯ তারিখ কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। কংগ্রেসের সদস্য মনোনয়ন পত্র জমা দিতে ব্যস্ত থাকবেন জেনেই ওদিন সভার তারিখ ঠিক করা হয়েছে। বিজেপি সাংসদদের আসা সুনিশ্চিত করতে, কোনো কোনো সাংসদকে দিল্লিতে আনতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। এথিক্স কমিটির সঙ্গে সাংসদের বিরোধ প্রথম থেকেই চলছিল। যত দিন গড়িয়েছে, তত সেই বিরোধের সুর চড়েছে। এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকর নিরপেক্ষতার ন্যূনতম লক্ষণও দেখাননি। ২ নভেম্বর এথিক্স কমিটি অভিযুক্ত সাংসদকে জেরা করে। সাংসদের অভিযোগ, জেরার নামে তাঁকে রীতিমত অপমান করা হয়। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা হয়। প্রতিবাদে জেরা শেষ করার আগেই তিনি এবং কমিটির বিরোধী দলের সদস্যরা সভা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

বিরোধীদের অভিযোগ, জেরায় এথিক্স কমিটির সঙ্গে মহুয়ার আলোচনা ও তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ ৯ নভেম্বরের আগেই বিজেপি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দিয়েছে, যা সংসদীয় রীতিনীতির বিরোধী। এথিক্স কমিটিই অনৈতিক কাজে অভিযুক্ত। শুধু তাই নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ প্রকাশের আগেই, বিজেপি সাংসদ সিবিআই তদন্ত হবে বলে সংবাদমাধ্যমে জানান। ৯ নভেম্বরের সভা ছিল আনুষ্ঠানিক। সভা ওইদিন পাঁচ মিনিটও চলেনি। সংসদের বাদল অধিবেশনে মণিপুর নিয়ে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রায় সোয়া দুই ঘন্টা ভাষণ দিয়েছিলেন। তারমধ্যে মণিপুর প্রসঙ্গে পাঁচ মিনিটও বলেননি। প্রধানমন্ত্রীকেই অনুসরণ করেছেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান। স্বৈরতন্ত্রে এমনটাই হয়।

বিরোধীরা বলছেন, অভিযুক্তকে অভিযোগ খণ্ডনের সুযোগ না দিয়ে বিচারের নামে একপ্রকার প্রহসন হয়েছে। মহুয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধী শিবিরের ঐক্য খুব তাৎপর্যপূর্ণ। ইন্ডিয়া জোট এই প্রশ্নে প্রথম থেকেই ঐক্যবদ্ধ। বামেরাও বিজেপির আচরণের প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে আসছেন। এই রাজ্যের বামেরাও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আদানি প্রীতির অভিযোগ তুলে একপ্রকার সাংসদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মহুয়ার নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রশ্নে অনেকটাই নরম। কিছু বিবৃতি দিয়েই তারা দায় সেরেছে।

বিজেপির আগ্রাসী মনোভাব, তৃণমূলের নরম প্রতিক্রিয়া – এসবের কারণ খুঁজতে গেলে কর্পোরেট জগতের সঙ্গে বিভিন্ন শাসকদলের সখ্য বুঝতে হবে। মহুয়া আদানি গোষ্ঠীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রশ্নগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। এমনিতেই বেশ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর প্রতি কেন্দ্রের দুর্বলতা সকলের জানা। আদানির মত কেন্দ্রের প্রিয়ভাজন কিছু শিল্পগোষ্ঠীর বিরোধিতা করলেই বিজেপি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধ করতে নানা অগণতান্ত্রিক কৌশল নেয়। তার উপর বিরোধী পক্ষের বলিয়ে কইয়ে সাংসদকে হেনস্থা করতে তারা প্রথম থেকেই সচেষ্ট। এই রাজত্বে প্রশ্ন করা মানা, অধিকারের কথা বলা মানা। সরকারের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই দেশপ্রেমের একমাত্র পরিচয়। সাধারণ নাগরিক তো বটেই, বিরোধী দলের নেতা, সাংসদদের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। খোদ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ পর্যন্ত অতি তৎপরতার সঙ্গে খারিজ করা হয়েছিল। সংসদের ভিতরেও কোনো বিরোধী কণ্ঠস্বর রাখা হবে না।

বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেন, মহুয়া অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে সংসদে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন। জয় অনন্ত দেহাদ্রাই তাঁকে একথা জানান। শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানি নাকি তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থে সাংসদকে দিয়ে প্রশ্ন করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অভিযোগ এই যে সাংসদদের পোর্টালের লগ ইন আই ডি, পাসওয়ার্ডও মহুয়া দর্শনকে দিয়ে দিয়েছিলেন। দেহাদ্রাই বা হিরানন্দানির নাম এর আগে সাধারণ মানুষ জানতেন না। হিরানন্দানি যে আদানির মত রাঘব বোয়ালের প্রতিদ্বন্দ্বী, তাও জানা ছিল না।

এরপর আসরে নামল গোদি মিডিয়া। তাদের বিচারে সংসদে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আনা প্রশ্নগুলি আড়ালে চলে গেল। সাংসদের ব্যক্তিগত জীবন, এমনকি বাড়ির পোষা কুকুরও সেই বিচারে রেহাই পেল না। হিরানন্দানিও হলফনামায় অভিযোগ একপ্রকার মেনে নিলেন। তাঁর দাবি, আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মত প্রশ্ন তৈরি করতেই মহুয়া তাঁকে সাংসদের লগইন আই ডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। পরিবর্তে সাংসদ তাঁর থেকে দামি দামি উপহার নিতেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, অভিযুক্ত সাংসদ যদি নিজের স্বার্থেই এসব করে থাকেন, তাহলে হিরানন্দানি তাঁকে দামি উপহার দিতেন কেন? কেনই বা এখন হলফনামা পেশ করে তিনি এসব কথা জানাচ্ছেন? মহুয়া এথিক্স কমিটিকে চিঠি দিয়ে হিরানন্দানিকে প্রশ্ন করার সুযোগ চান। সেই সুযোগও তাঁকে দেওয়া হয়নি। এথিক্স কমিটির সুপারিশের আগেই বিজেপি ও গোদি মিডিয়ার বিচারসভায় সাংসদকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কমিটি স্রেফ সেই বিচার অনুমোদন করেছে।

মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার নিশ্চয়ই করতে হবে। কিন্তু বিচারে অভিযুক্তকেও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ দিতে হয়। আবার এও নিশ্চিত করা দরকার যে বিচারসভা সব অভিযোগের ক্ষেত্রেই বসছে, বিচারকরা সব ক্ষেত্রে সমান সক্রিয় থাকছেন। সেটাই গণতন্ত্রের লক্ষণ। কিন্তু সংসদের এথিক্স কমিটি বলে যে কিছু রয়েছে তা আমরা ভুলতে বসেছিলাম। নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল সাংসদদের বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসেই সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরী বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ দানিশ আলিকে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেছিলেন। সংবিধানবিরোধী এই আচরণের পরেও তাঁর বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটি নিষ্ক্রিয়। উলটে এথিক্স কমিটির সদস্য দানিশকে মহুয়া কাণ্ড নিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাঁকেও শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

আরো পড়ুন রমেশ কাণ্ডের পর সংসদে ঘৃণাভাষণও কি সয়ে যাবে আমাদের?

কিছুদিন আগেই বিরোধী রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের মোবাইল থেকে তথ্য হাতানোর অভিযোগ উঠেছিল। অ্যাপল থেকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল, রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকাররা এই কাজ করছে। বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও সংসদের স্থায়ী কমিটিকে এই নিয়ে তদন্ত করতে দেওয়া হয়নি। যেখানে সরকারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, সেখানে সরকারই এই বিষয়ে তদন্ত করছে! পেগ্যাসাস কাণ্ডেও সরকারের একই ভূমিকা ছিল। আচ্ছে দিনের এই ভারতে বিরোধী সাংসদেরও গোপনীয়তার অধিকার থাকছে না। সরব হলেই সেটা নাকি দেশদ্রোহিতা। এই ধারা অনুযায়ীই বিচারের আগেই মহুয়ার বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ আনা হল। অথচ আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন বলে গণ্য করা হচ্ছে না। উলটে এসব নিয়ে প্রশ্ন করাই নাকি জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। বিজেপি ও গোদি মিডিয়া এমনটাই প্রতিপন্ন করতে চাইছে।

আদানি গোষ্ঠী হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তার বক্তব্য জানানোর সময়ে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেছিল। দেশপ্রেমের ধুয়ো তুলে নিজেদের কেলেঙ্কারি ঢাকতে চেয়েছিল। কারচুপি করে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে এই গোষ্ঠী দেশের কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জেরে শেয়ার বাজারে ধস নামায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এলআইসির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আদানি গ্রুপ কিন্তু শাস্তি পায়নি। তার আগে ও পরে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানারকম কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। আদানির বন্দরে একাধিকবার নিষিদ্ধ ড্রাগ ধরা পড়েছে। তারপরেও তাঁকে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ একপ্রকার উপহার দেওয়া হচ্ছে। কর ফাঁকি দিলে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ক্ষতি করলে, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুঠ করলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না। বরং এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলাই নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক! মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক দিয়ে আদানির এই কুকীর্তি ও দেশদ্রোহিতাকে আড়াল করা যায় না।

আদানিকে একের পর এক বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেওয়া নিয়ে মহুয়া প্রশ্ন তুলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের মত রাজ্যের তৃণমূল সরকারও কিন্তু এই অভিযোগে অভিযুক্ত। মহুয়া কাণ্ডে তৃণমূলের নরম ভূমিকার এটাই কারণ। আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সখ্যও আজ দিনের আলোর মত পরিষ্কার। রাজ্যের সমুদ্র বন্দর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই এই গোষ্ঠীকে উপহার দেওয়া হচ্ছে। আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুবিধা করে দিতে রাজ্যের আমবাগান ধ্বংস করা হয়েছে। আসলে কর্পোরেটের মুনাফার স্বার্থে দেশ তথা রাজ্যের স্বার্থবিরোধী নীতিগ্রহণ এবং তাকেই উন্নয়ন বলে গেলানোর প্রশ্নে কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারের কোনো বিরোধ নেই। এর আগেও মুম্বাইতে ইন্ডিয়া জোটের নৈশভোজে তৃণমূল অংশগ্রহণ করেনি। বৈঠকে আদানি গোষ্ঠীর বিরোধিতার প্রতিবাদেই নাকি তারা অংশ নেয়নি।

যে দল সিবিআই, ইডির বিরুদ্ধে এত সরব, সেই দল মহুয়ার প্রশ্নে কিন্তু প্রথম থেকেই নরম। এটা সাংসদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এথিক্স কমিটির সুপারিশের পরেও বিবৃতি দেওয়া ছাড়া এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি।

অথচ একই সময়ে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নস্যাৎ করে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। আগেও দুর্নীতির দায়ে তৃণমূলের কোনো নেতা ধরা পড়লে তাঁর হয়ে দল রাস্তায় নেমেছে। ‘আমরা চোর’ প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তৃণমূলের মিছিল দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের পাশে দাঁড়ালেও, আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে নিজের দলের কারোর সাংসদ পদ খারিজের উপক্রম হলে তৃণমূল দূরত্ব বজায় রাখে গোপন বোঝাপড়ার জন্য। কর্পোরেট প্রেম বিজেপি ও তৃণমূলের মেলবন্ধন ঘটিয়ে দেয়।

মনে রাখা ভাল, নির্বাচনী বন্ডে ২০১৭-১৮ সাল থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত মোট অর্থ উঠেছিল ৯,২০৮.২৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫,২৭১.৯৭ কোটি টাকা পায় বিজেপি; ৭৬৭.৮৮ কোটি টাকা পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। কর্পোরেট সংস্থাগুলিই যে মূলত এই বন্ড কেনে তা অজানা নয়। এই বন্ডের বিরুদ্ধে বামেরা প্রথম থেকেই সরব। নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে চলা মামলায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, কারা বন্ড কিনেছে তার তথ্য জানার অধিকার জনগণের নেই। কর্পোরেট সংস্থাগুলি বন্ড কিনে কোনো রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করে কিন্তু দেশপ্রেমের জন্য নয়। করে বিনিময়ে সুযোগ পাওয়ার জন্য। সেই তথ্য আড়াল করে আসলে সরকারের সঙ্গে কর্পোরেটের অশুভ আঁতাতের চিত্রটাকে ধামাচাপা দেওয়া হয়। বন্ডের অর্থে নির্বাচন হয়ে উঠছে ব্যয়বহুল। নির্বাচিত সরকারের নীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করতেই এই নির্বাচনী বন্ডের আয়োজন। এখন নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে বিশেষ বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর দহরম আর আড়ালে নেই। এই ধান্দার পুঁজিবাদই আজকের পুঁজিবাদের চালিকাশক্তি। মোদী ক্ষমতায় আসার পর আদানি গোষ্ঠীর দ্রুত উত্থানের রহস্য এটাই। তৃণমূলও যে কর্পোরেট মহলের খুব প্রিয় তা নির্বাচনী বন্ডের হিসাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে। দেশে এতগুলি দল থাকতে মাত্র একটি রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে তারা অর্থপ্রাপ্তির বিচারে তৃতীয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, এই টাকার উৎস জানার অধিকার জনগণের নেই। জনগণের অধিকার কেবল ভোটদানেই সীমাবদ্ধ। সেই অধিকারও অবশ্য সুরক্ষিত নয়। দেশ চলবে কর্পোরেটের নির্দেশে, বশংবদ বিভিন্ন সরকারের ব্যবস্থাপনায়। তাকে সমর্থন করাই নাগরিকের মহান কর্তব্য। সরকার এখন তাই নাগরিক অধিকার নিয়ে নীরব, কর্তব্য বোঝাতেই ব্যস্ত। অধিকার নিয়ে সরব হলেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দাঁত নখ বেরিয়ে আসছে। এই গণতন্ত্রে কর্পোরেটের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করা তো মহা অপরাধ। সরকারের বিরোধিতার অর্থই যে দেশদ্রোহিতা তা কয়েক বছর ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে, কর্পোরেটবিরোধিতা আর দেশদ্রোহিতা সরকারের কাছে সমার্থক। কর্পোরেটের নিরাপত্তা মানেই দেশের নিরাপত্তা। পুঁজির সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে এভাবেই ফ্যাসিবাদের ভিত তৈরি হয়। মহুয়া কাণ্ডে বিজেপি ও তৃণমূলের আচরণ সেটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.