গত সপ্তাহে উত্তরবঙ্গ সংবাদ কাগজের প্রথম পাতার একটা প্রতিবেদন বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক উত্তরবঙ্গের সাতটা জেলা, বিহারের সীমাঞ্চলের কয়েকটা জেলা এবং নিম্ন আসামের এক বা একাধিক জেলা নিয়ে একটা নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার প্রস্তাব বিবেচনা করছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজবংশীরা যাঁকে প্রধান বলে মানেন সেই মহারাজা অনন্ত রায় এবং কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান জীবন সিং (অধুনা আসামের বাসিন্দা) এই প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে আগাগোড়া যুক্ত থেকেছেন। লেখা হয়েছে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ঘোষণা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে শিলিগুড়িতে জীবনের উপস্থিতিতে হতে পারে। সত্যি কথা বলতে, এ বছর এই সম্পর্কে এটাই প্রথম লেখা নয়। জুলাই মাসে স্বরাজ্য ওয়েবম্যাগের এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে এই নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিবেদন এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। কারণ এই প্রতিবেদন কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে চলা এলেবেলে ওয়েবসাইটে বেরোয়নি, বেরিয়েছে উত্তরবঙ্গের সর্বাধিক পঠিত খবরের কাগজে। গভীর তদন্ত এবং গবেষণামূলক সাংবাদিকতার জন্য উত্তরবঙ্গ সংবাদের যথেষ্ট সুনাম আছে।

এখন প্রশ্ন হল, এরকম প্রস্তাব কি এই প্রথম? তা কিন্তু নয়।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

গত বছরের জুলাই মাসে, ফলপ্রকাশের মাস দুয়েক পরেও, বিধানসভার নির্বাচনের বিষাক্ত প্রচার পর্ব যে উত্তেজনা তৈরি করেছিল তা থিতিয়ে যায়নি। কারণ জয়ের অন্যতম দাবিদার বিজেপি জনগণের রায়ে পরাজয় খুশি মনে মেনে নিতে পারেনি। পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা জিইয়ে রাখার জন্য উত্তরের জেলাগুলো থেকে পৃথক রাজ্যের দাবি তোলা হয়েছিল। আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোকে বাকি রাজ্য থেকে আলাদা করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করার দাবি তুলেছিলেন। জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায় তাঁকে সমর্থনও করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তিই সেই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র নিন্দা করে, বিজেপি সাবধানী প্রতিক্রিয়া দেয়। বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপির রাজ্য শাখা এই দাবি থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখে।

এবারে কিন্তু রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের দিক থেকে রাজ্য ভাঙার খবর নিয়ে এক লাইনের প্রতিক্রিয়াও দেওয়া হয়নি। বিজেপি যথারীতি ঝেড়ে কাশছে না। বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এরকম কোনো প্রস্তাবের অস্তিত্বই অস্বীকার করেছেন, আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ওই প্রতিবেদনের সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার – কোনোটাই করেননি। এদিকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বাংলা ভাগ করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। বামপন্থীরা এই প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেননি। বিহার বা আসাম থেকেও এখন পর্যন্ত টুঁ শব্দ পাওয়া যায়নি, যদিও একথা সবাই জানে যে জীবন আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তবে কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হল, গতবছর বার্লা যেমন করেছিলেন, এবছর অনন্ত রায়ও তেমন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ওই অঞ্চলের তিনটে পরিচিতিভিত্তিক আন্দোলনের দাবির কথা তুলে ধরেছেন। তা সেই আন্দোলনের মানুষজন এই নতুন দাবি সম্পর্কে কী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন?

গতবছর বার্লার প্রস্তাব উত্তরবঙ্গের সমতলভূমির রাজবংশীদের একটা অংশের মধ্যে কিছুটা সমর্থন পেয়েছিল, এবারের প্রস্তাবেরও সেই সম্ভাবনা আছে। এঁরাই বৃহত্তর কোচবিহার এবং কামতাপুর আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি। নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব অন্তত ভৌগোলিক দিক থেকে এঁদের দাবির সঙ্গে অনেকখানি সঙ্গতিপূর্ণ। কিন্তু উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে পুরনো যে আন্দোলন, অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন, তার পাত্রপাত্রীরা সম্ভবত সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন। যেমনটা গতবছর করেছিলেন। কেন?

একটা কথা ভাল করে বুঝে নেওয়া দরকার। উত্তরবঙ্গের নানা দিক থেকেই জুড়ি নেই এবং এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে জাতি, ধর্ম, ভাষা – সব দিক থেকেই বিপুল বৈচিত্র্য রয়েছে। এখানকার উপজাতীয় বা আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো জাতিগত, ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর অনেকগুলোই আবার পরস্পরবিরোধী। বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যায় কামতাপুর ও গোর্খাল্যান্ডের প্রস্তাবিত মানচিত্র দুটোর দিকে তাকালে। অনেকখানি এলাকা দুই মানচিত্রেই রয়েছে।

উত্তরবঙ্গের
প্রস্তাবিত কামতাপুর রাজ্যের মানচিত্র। ছবি ইন্টারনেট থেকে
উত্তরবঙ্গের
প্রস্তাবিত গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের মানচিত্র। ছবি ইন্টারনেট থেকে

বিহারের সীমাঞ্চলের জেলাগুলো এবং নিম্ন আসামের গোটা দুয়েক জেলাকে এর সঙ্গে যোগ করলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে।

কামতাপুর আর বৃহত্তর কোচবিহারের আন্দোলন মোটামুটি থিতিয়ে গিয়ে থাকলেও গোর্খাল্যান্ড সম্পর্কে ভাবাবেগ এখনো যথেষ্ট তীব্র। ওই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য বাংলা এবং বাঙালিদের আধিপত্য ত্যাগ করে পাহাড় এবং সংলগ্ন ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের নেপালিভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য একটা আলাদা রাজ্য তৈরি করা। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যে প্রস্তাবের কথা জানা গেছে, ভৌগোলিক এবং জনগোষ্ঠীগত দিক থেকে তার চরিত্র একেবারেই আলাদা। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে গোর্খারা কলকাতার শাসনের বদলে শিলিগুড়ির শাসনে আসবেন – তার বেশি কিছু নয়। সত্যি কথা বলতে পাহাড়ের মানুষের শিলিগুড়ির প্রতি বৈরিতা কলকাতার চেয়ে বেশি বৈ কম নয়।

এই অঞ্চলের অন্য জনগোষ্ঠীগুলোরই বা কী হবে? চা বাগানের আদিবাসীরা, যাঁদের একজন বার্লা নিজে, সংখ্যার দিক থেকে উত্তরবঙ্গের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাম্প্রতিককালে তাঁরা বিজেপিকে ভোট দিতে পছন্দ করছেন ঠিকই, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা হওয়ার প্রস্তাব সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি। ওঁদের মধ্যেকার সবচেয়ে বড় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে বলেছেন তাঁর প্রাক্তন সহযোদ্ধা বার্লার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।

যদি উত্তরবঙ্গের অন্য ভাষাগোষ্ঠীর কথা আলোচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বাঙালিদের মধ্যে এর পক্ষে সমর্থন খুবই কম। যেটুকু আছে তাও আলিপুরদুয়ার আর কোচবিহার জেলার আসাম সীমান্তের এলাকাগুলোতে। তার কারণ সেখানকার বাঙালিদের শিকড় নিম্ন আসামে এবং বাকি পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতার সঙ্গে সংযোগ ক্ষীণ। বাকি রইলে উত্তরবঙ্গের হিন্দিভাষীরা। তাঁরা এমন কোনো আন্দোলন অথবা দাবিকেই সমর্থন করবেন না যার নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে।

প্রস্তাবিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নামকরণও তাঁদের কাছে একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। ওই নতুন প্রশাসনিক কাঠামো কার অভিলাষ পূরণ করবে? না গোর্খাদের ইচ্ছাপূরণ হবে, না উত্তরবঙ্গের অন্য সম্প্রদায়গুলোর। তাহলে এবার ভেবে দেখা যাক এই তথাকথিত প্রস্তাবের সুদূরপ্রসারী ফলাফল কী হতে পারে।

যদি তাদের রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিক থেকে সামান্যতম সমর্থনের আভাস পাওয়া যায়, তাহলে মধ্য এবং দক্ষিণবঙ্গে পার্টি হিসাবে বিজেপি শেষ হয়ে যেতে পারে। অবশ্য যদি বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপারে একেবারেই হাল ছেড়ে দিয়ে থাকে তাহলে আলাদা কথা। তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আরও একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিলে পার্শ্ববর্তী আসাম এবং বাকি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পরিচিতিভিত্তিক দাবি এবং আন্দোলনগুলো আবার মাথাচাড়া দিতে পারে। যেমন প্রস্তাবিত বৃহত্তর কোচবিহার আর কামতাপুর রাজ্যের মধ্যে আছে নিম্ন আসামের পাঁচটা জেলা। সে দাবিকে গুরুত্ব দিলে বোড়োল্যান্ডের দাবি নতুন করে উঠে আসা অনিবার্য। কার্বি-আংলং জেলার ডিমা হাসাওয়ের জন্য আন্দোলনও নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে। বিজেপি কি এতগুলো ঝুঁকি নেবে? সম্ভাবনা কম। বিজেপির কোনো কোনো উত্তরবঙ্গের নেতা আবার বলছেন যেহেতু উত্তরবঙ্গ আন্তর্জাতিক সীমান্তবর্তী এলাকা, সেহেতু জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই অঞ্চল কেন্দ্রশাসিত হওয়া উচিত। কিন্তু এই যুক্তি মানলে গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলই কেন্দ্রশাসিত হওয়া উচিত। সে কাজ করা দূর অস্ত, প্রস্তাবটা পর্যন্ত বিজেপি বলে উঠতে পারবে না। কারণ তার ফল হবে মারাত্মক।

তাহলে খবরটাকে কীভাবে দেখা উচিত? আমার নিজের দুটো তত্ত্ব আছে। সেগুলোর আলোচনায় যাওয়ার আগে একবার বার্লার দিকে তাকানো যাক। তিনি একজন কড়া ধাতের লড়াকু রাজনীতিবিদ যিনি গেরুয়া শিবিরে গেছেন নয়ের দশকে আরএসপি ও কংগ্রেসের সমর্থনপুষ্ট চা বাগানের ট্রেড ইউনিয়ন করে। বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার আগে বার্লা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। এমন লোক কি গতবছর জুলাই মাসে স্রেফ নিজের মর্জিতে আলাদা রাজ্যের কথা বলেছিলেন? অসম্ভব। সম্ভবত দিল্লির নেতাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। তাঁরা ভবিষ্যতে দরকার পড়লে ব্যবহার করার জন্য ইস্যুটাকে পরখ করে দেখতে চাইছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গকে অশান্ত করে রাখা।

এখানেই আমার প্রথম তত্ত্ব।

গত এক দশকে উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তাদের প্রভাব ক্রমশ কমছে। দক্ষিণবঙ্গে এমনিতেই দুর্বল হওয়ার কারণে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করার জন্য বিজেপি তাকিয়ে আছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর দিকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজেপি আলাদা রাজ্যের দাবিতে চলা আন্দোলনগুলো থেকে নির্বাচনী ফায়দা তোলার ব্যাপারে ওস্তাদ। ২০০৯ সাল থেকে তারা গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে ব্যবহার করে পরপর তিনবার দার্জিলিং আসনটা জিতেছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজবংশীদের মধ্যেও তারা যথেষ্ট আধিপত্য বিস্তার করেছে। এইসব ছোট ছোট সুবিধাগুলোকে একসঙ্গে ২০২৪ নির্বাচনে ব্যবহার করার জন্যই হয়ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গাজর ঝোলানো হচ্ছে।

এবার আসি দ্বিতীয় তত্ত্বের কথায়।

তৃণমূল কংগ্রেসের সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না। দিল্লির সরকার সিবিআই, ইডির মত কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে তৃণমূলকে যথেষ্ট চাপে রেখেছে। তাদের বেশকিছু প্রথম সারির নেতা দুর্নীতির অভিযোগে হাজতবাস করছেন। সংবাদমাধ্যমেও নাক কাটা যাচ্ছে রোজ। একের পর এক ঘটনায় তৃণমূলের ভোটারদের একটা অংশ যথেষ্ট অস্বস্তিতে। এই অংশটা মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত। এঁদের ভোট বামপন্থীদের কাছে, এমনকি কংগ্রেসের কাছেও ফিরে যেতে পারে। বঙ্গভঙ্গের মত একটা ভাবাবেগ সংক্রান্ত ইস্যু সেই অঘটন অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারে। উপরন্তু টেট কেলেঙ্কারি, গরু পাচারের মত ইস্যুগুলো থেকেও সংবাদমাধ্যমের নজর ঘুরিয়ে দিতে পারে।

এই দুটো তত্ত্বের যে কোনোটাই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের গল্পের নেপথ্যে থাকতে পারে। আবার দুটোই একসঙ্গে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে রাজ্যের শাসক দলের সচেতন নীরবতার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এই ধারণার পিছনে বড় কারণ সামান্য কিছুদিন আগে রাজ্য সরকারের সঙ্গে অনন্ত মহারাজের ঘনিষ্ঠতা।

আরো পড়ুন উত্তরবঙ্গ: যেসব প্রশ্নের উত্তর কেউ চায় না, কেউ দেয় না

পরিশেষে যে কথা না বললেই নয়, তা হল উত্তরবঙ্গের মানুষের সঙ্গত কারণেই অনেক অভাব, অভিযোগ আছে। অন্ধ না হলে যে কেউ দেখতে পাবেন রাজ্যের এই অঞ্চল কতটা প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলার শিকার হয়ে এসেছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন বলে প্রায় কিছুই হয়নি উত্তরবঙ্গে, সে স্বাস্থ্যের কথাই বলুন আর শিক্ষার কথাই বলুন। কর্মসংস্থানের সুযোগও অতি সামান্য। এসবের সমাধান উত্তরবঙ্গের জন্য আলাদা মন্ত্রক তৈরি করা বা ওই অঞ্চলের জন্য তথাকথিত আলাদা সচিবালয় উত্তরকন্যা স্থাপন করা নয়। স্থানীয় মানুষকে উন্নয়নের প্রক্রিয়ার অংশীদার করতে হবে। ওই অঞ্চলের সাবেকি শিল্পগুলো, অর্থাৎ চা শিল্প এবং পর্যটন শিল্পকে ঢেলে সাজাতে হবে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ তৈরি করার দিকে বেশি জোর দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা উত্তরবঙ্গের জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের উদযাপন দরকার। স্রেফ বেড়ানোর পুস্তিকায় আর ওয়েবসাইটে অঞ্চলটাকে প্রপ বানিয়ে রাখলে কোনো লাভ হবে না। উত্তরবঙ্গকে বাকি বাংলার মত করেই শাসন করতে হবে, শুধু কলকাতা থেকে বেড়াতে যাওয়ার জায়গা হিসাবে দেখলে চলবে না।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.