২০২০ এবং ২০২১ সালে সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য বাংলার পুতুল শিল্পের উপর একটি তথ্যচিত্র সিরিজ বানানোর উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ ঘটেছিল। তথ্যচিত্রে আমার ভূমিকা ছিল গবেষণা ও চিত্রনাট্য রচনার। এছাড়া অন্যান্য খুঁটিনাটি কাজ, যেমন উপযুক্ত শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে কথা বলা – এসবের ভারও পরিচালক আমাকেই দিয়েছিলেন। এককথায় গোটা প্রকল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে পড়েছিলাম।

কাজটা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের শেষভাগে, অর্থাৎ কোভিড অতিমারী এবং তার কারণে আরোপিত অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর কোমর ততদিনে একেবারে ভেঙে গেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে গিয়েছিলাম গ্রাম-মফস্বলে। স্বভাবতই বাস্তবের ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখার সুবর্ণ সুযোগ এসে উপস্থিত হয় আমাদের সামনে। কোভিড অতিমারীর কারণে সেবার দুর্গাপুজোর আনন্দ-উৎসবে খানিক ভাঁটা পড়েছিল, ফলে শিল্পীদের সার্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছিল। কিন্তু এই স্পষ্টতার আড়ালেও অন্য যে একটি সমস্যা বিদ্যমান, সেকথা জেনেছিলাম ক্রমে ক্রমে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আমরা প্রথমে যাই নতুনগ্রামের কাঠের পুতুলের উপর তথ্যচিত্র তুলতে, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। নতুনগ্রাম বর্ধমানের পাটুলী-অগ্রদ্বীপের কাছে। সে দেশ ধানের দেশ। শরতের শুরুতে সবুজ ধানে ভরে আছে চারপাশ। বর্ষায় পুষ্ট ভাগীরথী, কাশবন – সবই যেন সেজে বসে আছে ক্যামেরায় ধরা পড়তে। গ্রামের কয়েক ঘর মেয়ে-পুরুষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন কাঠখণ্ড নিয়ে।

সরকারি টেলিভিশনে এক বিশেষ ধরনের নির্মাণ রীতি অনুসরণ করা হয় তথ্যচিত্রের ক্ষেত্রে। সেইমত কাঠ কাটা, কাঠ চেরাই থেকে শেষপর্যন্ত পুতুল তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিকেই ক্যামেরায় তুলে ধরার কাজ চলে। কাঠ চেরাই দুটি ধাপে হয়। প্রথমে সুবিশাল ব্যান্ডশ (bandsaw) মেশিনে বড় বড় আমকাঠ বা গামাকাঠের গুঁড়িকে চেরাই করা হয়, তারপর হয় হাত-চেরাই। এই চেরাই প্রক্রিয়াটি দেখার পরেই যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা থেকে বুঝতে পারি, বিশ্বায়নের রাজনীতি কীভাবে ঐতিহ্যকে ঢাল করে এক স্পষ্ট বিভাজনরেখা তৈরি করেছে মানুষে মানুষে।

কলকাতা থেকে দল গেছে, স্বভাবতই গ্রামের মানুষজন ব্যস্ত হয়ে সেবা করার প্রয়োজন অনুভব করতে থাকেন। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আমরা একজন, খুব বেশি হলে দুজন, প্রতিনিধি স্থানীয় শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারি। কলকাতা থেকে তথ্যচিত্র করতে লোক আসবে শুনলেই তাঁরা উল্লসিত হয়ে ওঠেন। সব দেখানোর দায়িত্ব তুলে নেন নিজেদের কাঁধে। নতুনগ্রামেও ঠিক তাই হয়েছিল।

শিল্পীদের একটি সমবায় সমিতি গোছের রয়েছে, সেটি অনুদান পায়। সেই সমিতিই তৈরি করে দিয়েছে ঝাঁ চকচকে একটি গেস্ট হাউস। মার্বেলের মেঝে, রট আয়রনের বিছানা-টেবিল আর দেওয়াল জুড়ে কাঠের নানা জিনিসে সাজানো ঘর – আমাদের মতো শহুরে ভোগবাদীদের আরামের সমস্ত উপকরণ মজুত। অর্থাৎ গ্রামীণ শিল্পের সৃষ্টির যে অন্তরাত্মা, সেই শিকড়ের কাছে পৌঁছনোর সমস্ত পথ ওখানেই বন্ধ। সেই গেস্ট হাউসের পাশেই অনেকটা জমিতে শ মেশিন। ঘড়ঘড় শব্দে চেরা হয়ে চলেছে কাঠ। সেসবের ছবি তুলে আমাদের দল এগোতে থাকে গ্রামের গভীরে, যেখানে উঠোনে উঠোনে পুতুল তৈরির যজ্ঞ চলছে।

বাকিরা এগিয়ে গেছে, আমি তখনো নিজের ছোট ডিজিট্যাল ক্যামেরায় আমার গবেষণার সুবিধার্থে কিছু ভিডিও তুলে রাখছিলাম। সেসব তুলে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরোতে যাচ্ছি, একজন কারিগর হঠাৎ প্রায় ছুটে এলেন আমার কাছে। তাঁর পুরো কথাটি আমার মনে নেই, কিন্তু মোটামুটি এমনই বলেছিলেন “আমাদের জন্য কিছু করুন। রোজ এই মেশিনে কাঠ চেরা, একটু এদিক ওদিক হলে আঙুল চিরে বেরিয়ে যাবে। কতবার কেটেকুটে যায়, একটা ওষুধ কিনে দেওয়ার কেউ নেই। কত মাস ধরে রোজগার নেই। শিল্পীরা নিজেরা দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছে, আমাদের কথা তারা ভাবেই না।”

ওদিক থেকে তখন আমার ডাক পড়েছে, দাঁড়াবার সময় নেই। প্রতিশ্রুতি তো দূর, সান্ত্বনা দেওয়াও চূড়ান্ত কদর্যতা মনে হয় তখন। সারাদিন কাজ করার মাঝে আর একবারও ওই ব্যান্ডশ মেশিনের কাছে আসা হয়নি। দুবছর পার করে এখন তাঁদের অবস্থা কী, জানি না।

নতুনগ্রামের পর আমরা আরেকদিন যাই কৃষ্ণনগরে। সেখানকার অভিজ্ঞতা বলার আগে বোধহয় পুতুল শিল্পের ইতিহাস নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন।

কৃষ্ণনগরের যে জায়গাটিতে মূলত পুতুল তৈরি হয়, তার নাম ঘূর্ণী। স্টপেজটির নামই হয়ে গেছে পুতুলপট্টি। বাংলার বিপুল পুতুলশিল্পের মধ্যে কৃষ্ণনগর সন্দেহাতীতভাবে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বিশ্বে সুপরিচিত। সেই আন্তর্জাতিক খ্যাতি যে সাম্প্রতিককালে এসেছে তাও নয়। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হওয়া এই শিল্প ব্রিটিশ আমলে কতখানি খ্যাতি অর্জন করেছিল, কয়েকটি তথ্যেই তা বোঝা যাবে।

ভাবলে সত্যিই অবাক হতে হয়, উনবিংশ শতাব্দী থেকেই বাংলার এক প্রান্তের এই জায়গার শিল্পসামগ্রী প্রদর্শিত হচ্ছে পাশ্চাত্যে। ১৮৫৫ এবং ১৮৬৭ সালে ফ্রান্সের রাজধানী তথা শিল্পকলার পীঠস্থান পারিতে আয়োজিত যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় Exposition Universelle-এ কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীরা পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ওই সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য শিল্পীর নাম রাম পাল। এরপর ১৮৮০ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৮৮১ সালের ৩০ এপ্রিল অবধি, অর্থাৎ প্রায় ছমাস ধরে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আয়োজিত মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল এক্সিবিশনে যদুনাথ পালের তৈরি মাটির মূর্তি পুরস্কৃত হয়।

এই দুটি প্রদর্শনী ছাড়া আরও যে প্রদর্শনীগুলিতে মাটির পুতুল বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছিল, সেগুলি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে আয়োজিত The American Exhibition of the Products, Arts and Manufacturers of Foreign Nations (১৮৮৩), আমস্টারডামে আয়োজিত International Colonial and Export Exhibition (১৮৮৩), লন্ডনে আয়োজিত Colonial and Indian Exhibition (১৮৮৬), এবং গ্লাসগোয় আয়োজিত International Exhibition of Science, Arts and Industry (১৮৮৮)।

এই প্রসঙ্গে বর্তমানে ঘূর্ণীর সবচেয়ে সুবিখ্যাত শিল্পী সুবীর পালের মুখ থেকে শোনা তাঁর পূর্বপুরুষের একটি কাহিনিও বলে নেওয়া যেতে পারে।

সেই পূর্বপুরুষের নাম বক্রেশ্বর পাল। তাঁর কাছে সাহেবরা প্রায়ই আসতেন নিত্যনতুন শিল্প নিদর্শনের খোঁজে, সেগুলি বিদেশে যেত। একবার সেই শিল্পী একটি মরা গরুর মূর্তি তৈরি করেন। সুনিপুণ শিল্পদক্ষতায় পচাগলা গরুর দেহের খুঁটিনাটি তিনি ফুটিয়ে তোলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি এরকম বিষয় কেন বাছলেন মূর্তি তৈরির জন্য। তিনি উত্তর দেন, এই মরা গরুর মূর্তিটি তিনি ভাগাড়ে নিয়ে যাবেন, তারপর দেখাবেন, এই মরা গরুর মূর্তিই শকুনজাতীয় পাখিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। তিনি নাকি পরে তা করেও দেখিয়েছিলেন। সুবীর পালের বক্তব্য, এটিই গ্লাসগোর প্রদর্শনীতে পাঠানো হয়েছিল।

এহেন দক্ষতার জন্য যে শিল্পের বিপুল খ্যাতি সেই কোম্পানি আমল থেকে, সেই শিল্পের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম বিখ্যাত বা একেবারেই অখ্যাত পুতুল শিল্প বা আঞ্চলিক শিল্পের কোনো পার্থক্য কিন্তু নেই। অবহেলিত হয়ে থাকার কাহিনি এখানেও ঘোর বাস্তব। সম্প্রতি সরকারের তরফে নানারকম ব্র্যান্ডিং হওয়ায় কিছু সুযোগসুবিধা আসছে বটে, কিন্তু তা শিল্পসাধনার কতখানি উন্নতিসাধন করছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বস্তুত, আঞ্চলিক শিল্পকলাকে পণ্য বানিয়ে যে ফায়দা লোটার কাজ চলে সর্বত্র, তা সেই কলার কোনো উন্নতি ঘটাতে পারে আমার জানা নেই।

ঘূর্ণীতে সুবীর পালের কাছেই প্রথমে গিয়েছিলাম আমরা। বেশ বড় জায়গা নিয়ে তাঁর নিজস্ব কর্মশালা। বেশ কয়েকজন মৃৎ-কারিগর কাজ করেন সেই কর্মশালায়। তখন সামনেই দুর্গাপুজোর, ফলে শিল্পীরা বেশ ব্যস্ত। ইউরোপিয় পুরাণের দেবদেবীদের মূর্তি দেখেছিলাম প্রচুর। সঙ্গে মিনিয়েচার বা মাইক্রো মডেল তো আছেই। সুবীর পাল ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি পদক পান, তখন তাঁর বয়স ২০-২১। তারও আগে কৈশোরেই বিদেশ ঘুরে এসেছেন তাঁর শিল্পসামগ্রীর প্রদর্শনী উপলক্ষে। মুম্বাই, দিল্লি, কালিম্পং – এমন নানা জায়গায় তাঁর কাজ রয়েছে।

সেই শিল্পীই বলছিলেন “এখানে কোনো ট্রেনিং ইন্সটিটিউট নেই। এই শিল্প তৈরি করা ধৈর্যের ব্যাপার। আমি যতই পুরস্কার পাই, যত জায়গায় ডাক পাই, আমার বাবা বীরেন পাল কি সেই যুগের রাম পাল বা যদুনাথ পালদের মত হতেই পারব না। আমার তো কেবল মনে হয়, আমাকে সারাজীবন সময় দেওয়া হোক, আমি সারাজীবন ধরে শুধু এদের মত কাজ করতে শিখি। কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই। কোনো ঠিকঠাক পরিকাঠামো নেই।”

এত খ্যাতি, সম্মান পাওয়ার পরেও এই স্বীকারোক্তি তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বাড়িয়েছিল।

যদিও শিল্প পরিমণ্ডলে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার আঁচ তখনো টের পাইনি। তা পেলাম যখন সারাদিনের কাজ প্রায় শেষের পথে। আগেই বলেছি, আমরা গিয়েছিলাম ২০২০ সালের অক্টোবরে। তখনো করোনার ভ্যাক্সিন দেওয়া শুরু হয়নি। স্কুল-কলেজ খোলা তখনো অনেক দূর। লকডাউন পুরোপুরি উঠে যায়নি, ফলে রাস্তাঘাটের সার্বিক চিত্রটা কীরকম ছিল তা আন্দাজ করে নেওয়া কঠিন নয়। তারমধ্যেই শিল্পীরা নিজেদের দোকান খুলে বসেছেন। একজন প্রবীণ শিল্পী বললেন “কতক্ষণ হয়ে গেল দোকান খুলে বসে আছি, একটা বিক্রি নেই। এখনো বউনি হয়নি। কী বলব আর এই নিয়ে।” এ পর্যন্ত তেমন অচেনা ঠেকে না। অস্বস্তিতে পড়তে হয় পরের কথাটিতে “এখানে যারা জাতীয় পুরস্কার-টুরস্কার পায়, তারাও আর সেভাবে আমাদের কথা ভাবে না। নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত।”

নতুনগ্রামে যখন গিয়েছিলাম, তখন এরকমই কিছু আঁচ করছিলাম। সকলের সঙ্গে সকলের যেন সেই আন্তরিক বন্ধন নেই, কোথাও যেন তার কেটে গিয়েছে। পার্থক্য বলতে কৃষ্ণনগরে একজন সরাসরি সমস্যাটি বললেন, ওখানে কেউ সরাসরি বলেননি। এমনকি পরে যখন বাঁকুড়ায় গিয়েছি এই সিরিজের কাজে, বিকনার ডোকরা এবং পাঁচমুড়ার টেরাকোটার কাজ দেখতে, তখনো দেখেছি, পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের অট্টালিকা আর অন্যান্যদের ছোট ছোট ঘরবাড়ির মধ্যে জিইয়ে রাখা অর্থনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট।

জানি না ওই বয়স্ক মানুষটি কতখানি ক্ষোভ থেকে কথাটি বলেছিলেন আর তার কতখানিই বা সত্যি। এটাও ঠিক যে যাঁদের ঝুলিতে পুরস্কার উঠেছে, তাঁদের শিল্পের মান অন্যান্যদের তুলনায় সততই উৎকৃষ্ট, কাজের সূক্ষ্মতায় তাঁরা অনেক এগিয়ে। কিন্তু একইসঙ্গে আরেকটি কথাও সত্যি। বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষ্ণনগরে সরকারি নথিভুক্ত শিল্পী ও কারিগর আছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। তাঁদের মধ্যে এগারোশোর বেশি শিল্পীর রয়েছে নিজস্ব সরকারি পরিচয়পত্র। অথচ দোকানের সংখ্যা পঞ্চাশের আশেপাশে। অতএব হাতে গোনা কয়েকজনকে তুলে আনার একেবারেই এক রাষ্ট্রীয় কৌশল। আরও ভালভাবে বললে গণতন্ত্রের আড়ালে সামন্ততান্ত্রিক ভাবনা নিয়ে চলা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কৌশল। এই ব্যবস্থা শাসকদল নির্বিশেষে বহু বছর ধরে চলে আসছে। একেই আমরা চলতি কথায় টোকেনিজম বলি। বাংলা করলে হয় – প্রতীকবাদ।

এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার আগে প্রান্তিকতা নিয়েও কিছু কথা বলা দরকার, কারণ বাংলার কোণে কোণে ছড়িয়ে থাকা এই শিল্পী সম্প্রদায়ের সকলেই একরকম প্রান্তিক। মাত্র কয়েকদিন আগেই প্রান্তিকতা নিয়ে একটি আলোচনাসভায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জাদ মাহমুদ একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁর মতে, একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রের সাপেক্ষে এই প্রান্ত বা মার্জিনকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই কেন্দ্রে কারা আছে? উত্তর খুব সহজ, যাদের হাতে ক্ষমতা, তারাই কেন্দ্রবিন্দুতে বসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।

সেই প্রান্তে বা প্রান্তের বাইরে অবস্থিত মানুষজন সমস্তরকম সাধারণ সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে – এ যেন স্বাভাবিক ধারণায় পর্যবসিত হয়েছে। শোষক রাষ্ট্র যখন এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে, তখনই সে কোনো এক প্রান্তিক মানুষকে সামনে নিয়ে আসে নিজস্ব প্রয়োজনে। সেই মানুষটি তখন উপায়ান্তর না দেখে রাষ্ট্রের প্রশংসা করতে বাধ্য হন এবং ক্রমশই নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন। সরলীকরণ করছি না, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিত্রটা এমনই। সম্প্রতি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড় করানো এবং শেষমেশ তাঁর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই তর্ক আরও একবার উঠেছিল।

এর ব্যাখ্যা খুব সহজ করে লিখেছিলেন যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, তাঁর ‘লোহার ব্যথা’ কবিতায় – “তোমার হাতের যন্ত্র যাহারা দিনরাত মরে খেটে/না বুঝে চাতুরি নেহাই হাতুড়ি ভাই হয়ে ভাই-এ পেটে।”

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত যে শিল্পীদের প্রতি বৃদ্ধ মানুষটির অভিযোগ, আমি তাঁদের খুব বেশি দোষও দিতে পারি না। ভালভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার। এক বিরাট অংশের মানুষের সেই অধিকার খর্ব করে রাষ্ট্র, তার নিজের সুবিধার্থে। এ অবস্থায় একটি প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা কোনো একজন যদি নিজের যোগ্যতায় রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেয়ে ভালভাবে থাকতে চান, তাঁর শিল্পকে আরও বড় করতে চান, আরও ছড়িয়ে দিতে চান, তাতে সত্যিই দোষের কিছু নেই। এটা তো ঠিক, বিরাট সময় ধরে তাঁরা যেসব সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, আজ তা পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন যখন, ছাড়বেন কেন। একথা মেনে নেওয়াই ভাল যে ভীমরাও আম্বেদকরের মতো মানুষ হাতে গোনাই হয়। এইসব শিল্পীদের পক্ষে রাষ্ট্রের কূটকৌশল বোঝাও খুব একটা সম্ভব নয়। কারণ সেই তাত্ত্বিক আলোচনার আর্থিক পরিসর বা সময় তাঁদের কাছে নেই।

এখানে অবশ্য আরও একটি প্রশ্ন উঠতে পারে। সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরা না-ই বা কিছু করলেন, কিন্তু বৃহত্তর সমাজের প্রতি শিল্পীর যে দায়, তাকে তাঁরা অস্বীকার করেন কী করে? এ প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত ইংরেজ চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রদেনস্টাইনের ভাবনার কথা বলি। রবিঠাকুরের ইংরিজিতে অনূদিত গীতাঞ্জলি বিলেতের বিদ্বজ্জনদের মধ্যে প্রসিদ্ধিলাভের পিছনে রদেনস্টাইনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল, একথা অনেকেই জানেন। তেমন একজন শিল্পী এ ব্যাপারে কী ভাবছিলেন সেইসময়, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃস্মৃতি বইতে তা লিপিবদ্ধ হয়েছে

…সকালবেলা রোটেনস্টাইন এসেছিলেন তাঁর মেয়েদের নিয়ে। বাবার (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) সঙ্গে ওঁর কথা হচ্ছিল আধুনিক জগতে শিল্পী-সাহিত্যিক ও মনীষীদের কর্তব্য নিয়ে। যেখানে রাজশক্তি লোভের বশবর্তী হয়ে পরস্ব অপহরণে রত, সেখানে সমাজের বিদগ্ধ ব্যক্তিরা কি জেনেশুনেও সরকারের পক্ষে সহযোগিতা করবেন? বোঝা গেল রোটেনস্টাইন সহযোগিতার পক্ষে। দেশকে গড়ে তোলার কাজে সহায়তা করার জন্য রাষ্ট্র যদি আহ্বান জানায়, তা হলে বিদগ্ধমণ্ডলী সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কেমন করে পারেন? আসলে সমাজসেবার ভাব আধুনিক মানুষের মনের গভীরে এমনভাবে শিকড় চালিয়েছে, যে সে বুঝেছে সেখানেই তার মোক্ষলাভ। তা ছাড়া বিশেষভাবে যদি শিল্পীদের কথা বিচার করা যায়, তা হলে দেখা যাবে যে মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করা ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠছে। ললিতকলাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অপরিমিত অর্থ ব্যয় করা বিত্তবানের পক্ষেও দিন দিন দুরূহ হয়ে পড়ছে। সুতরাং রাষ্ট্রের মধ্যে দিয়ে জনগণের সেবা করা ছাড়া শিল্পীদের আর অন্য গতি নেই। বাবা বললেন, অন্যদের কথা যদি বাদও দেওয়া যায়, অন্ততপক্ষে শিল্পীদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রয়োজন। শিল্পীকে বিধিনিষেধের নিগড়ে বেঁধে রাখা মানে শিল্পকেই কুণ্ঠিত করা। দৃষ্টান্তস্বরূপ বাবা ইণ্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট-এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বললেন যে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতার ফলে শিল্পীদের মনের উপর তথা তাদের কাজের উপর যে প্রতিক্রিয়া ঘটছে, শিল্পের পক্ষে তা হয়তো স্বাস্থ্যকর নয়। রোটেনস্টাইন বললেন, বাধ্যবাধকতা থাকা শিল্পীদের পক্ষে সবসময়ে খারাপ নয়। পরন্তু শিল্পের বিষয়বস্তু যদি শিল্পীর রুচির উপরে একেবারে ছেড়ে না দেওয়া হয়, তা হলে ফল যে খারাপ হবেই এমন কথা নেই। ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইতালীয় শিল্পীরা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অপর দিকে তথাকথিত ‘শিল্পীর স্বাধীনতা’ যে সব সময়ে সুফল প্রসব করছে না, ‘ফিউচারিস্ট’ শিল্পীদের দেখেই তা বোঝা যায়।

এই সুদীর্ঘ অনুচ্ছেদটিতে রথীন্দ্রনাথ অনেকগুলি দিককে তুলে ধরেছেন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে।

শিল্প বেচে জীবিকা নির্বাহ করা আদিকাল থেকেই কঠিন। সেখানে সরকারি সাহায্য না পেলে ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে তোলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। অতীতের বহু প্রতিভাবান শিল্পীই রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্বয়ং কৃষ্ণচন্দ্র। আনুকূল্য পাওয়ার কারণেই রাজা বা রাষ্ট্র যখন অন্যায় কাজে লিপ্ত, তাঁদের অনেকেই চুপ করে থাকতে বাধ্য হতেন। যাঁরা বিরোধিতা করতেন, তাঁদের পরিণতি অনেক সময়েই হত ভয়ঙ্কর। ফলে, আদৌ শিল্পীর ঠিক কী কর্তব্য হওয়া উচিত, তা অনেক বেশি নির্ভর করছে একজন শিল্পীর তাৎক্ষণিক আর্থসামাজিক অবস্থান এবং তাঁর নীতিগত আদর্শের মত কিছু বিষয়ের উপর।

সাধারণভাবে আমরা এটাই বিশ্বাস করি যে একজন শিল্পী মানে তিনি আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি অনুভূতিপ্রবণ। ফলে একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসাবে অবশ্যই তাঁর কাজ হওয়া উচিত জনগণের জন্য। সেখানে শাসকের অন্যায় দেখেও কেবল পৃষ্ঠপোষকতা থাকবে না – এই ভয়ে চুপ করে থাকা কোনো শিল্পীরই কর্তব্য হতে পারে না।

কিন্তু শিল্পীর আর্থসামাজিক অবস্থানের কারণে শিল্পীসত্তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে জীবনধারণের সংগ্রাম। আমি যাঁদের কথা এখানে লিখছি, তাঁদের কাছে তো এ সংগ্রাম আরও বেশি কঠিন। শিল্পী হয়ত অভিমান করতে পারেন, কিন্তু বাজারের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে জয়লাভ দিবাস্বপ্নের মতই। ধুরন্ধর রাষ্ট্র এসব কথা জানে।

ওই একই বছরে, একই সময়ে মুর্শিদাবাদের কাঁঠালিয়ার মৃৎশিল্পী সাধন পালের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। গোটা ভারতে একমাত্র এখানকার শিল্পীরাই উৎকৃষ্ট মানের মসজিদের কালো মিনার তৈরি করেন। সেসব প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে রপ্তানিও হয়। সাধন পাল বলছিলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পীদের নিজস্ব সমবায় সমিতি চালান। মাটির চাকের বদলে বৈদ্যুতিক চাকের জন্য বছরের পর বছর ধরে তদ্বির করার পর অবশেষে ৭০টি বিদ্যুৎচালিত চাক তাঁরা আনাতে পেরেছিলেন। মাটির চাকে ধুলো বেশি ওড়ে, ফলে শিল্পীদের ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল চিরকালীন। তার উপর বিদ্যুৎচালিত চাকে অল্প সময়ে বেশি জিনিস তৈরি করা সম্ভব হয়। এখান থেকেই বোঝা যায়, কতখানি দৈন্য রয়েছে।

আরো পড়ুন বিড়ি শ্রমিক: যার কাজ আছে তার ভাত নেই

একথাও জানিয়ে রাখি, এই সিরিজটির কাজেই ২০২১ সালের শুরুর দিকে যখন বাঁকুড়ার লাগোয়া বিকনায় যাই ডোকরা শিল্পের কাজ দেখতে, তখন সেখানে বর্তমান রাজ্য সরকারের প্রভূত প্রশংসা শুনি। কারিগররা এও বলেন যে আগের রাজ্য সরকার সেভাবে কিছুই করেনি, কিন্তু এই সরকার অনেককিছু করেছে। শিল্পীদের জায়গায় আমরা দাঁড়িয়ে নেই, ফলে তাঁদের সেই মনোভাবের কারণ সম্পূর্ণ বোঝা আমাদের পক্ষে কঠিন। যে ব্র্যান্ডিংয়ের কথা বললাম একটু আগে, তা বহু শিল্পীরই রোজগার বাড়িয়েছে একথা সত্য। কিন্তু আরও একটি দিক আছে। ব্র্যান্ডিং যখনই হচ্ছে, সেখানে চাহিদা ও জোগান চলে আসছে। আজকের ডিজিটাল যুগ সবকিছুকেই ঘোড়দৌড়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। সেখানে যে যত বেশি জোগান দিতে পারে, তার তত লাভ। তাতে শিল্পের সূক্ষ্মতা কমে যেতে বাধ্য।

উপরন্তু কোনো বিশেষ জায়গার একটি বিশেষ পুতুলের চাহিদা অন্যান্য ধরনের পুতুলের চেয়ে বেশি। যেমন নতুনগ্রামের কাঠের প্যাঁচা বা পাঁচমুড়ার টেরাকোটার হাতি ঘোড়া বহু মানুষের জানা, ফলে সেগুলির ক্রেতাও বেশি। এই জোগানের চক্করে হারিয়ে যায় একদম হাতে গড়া পুতুল, যা আদি শিল্পধারা। যেমন পাঁচমুড়াতে রেলপুতুল, সেনাপতি পুতুল, হাতকাটা মেয়ে পুতুল বা ষষ্ঠীপুতুলের কোনো বাজার নেই। কয়েকজন বয়স্ক মহিলা কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছেন ওগুলিকে। দেখতে চাইলে প্যাকিং বাক্স থেকে ধুলো ঝেড়ে বার করে দেন।

সেরকম একজনের কথা বলেই শেষ করব। তাঁর নাম সাবিত্রী। বয়স আশির উপর তো বটেই। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে। মাটি-লেপা দাওয়ায় নিজের হাতে বানানো একটি ষষ্ঠীপুতুল মুঠোর মধ্যে ধরে বসেছিলেন তিনি। পরিপাটি করে পরা সবুজপেড়ে সাদা শাড়ি, মাথার উপর টানা ঘোমটা। পদবি জানতে চাইনি, কারণ ‘ঠাকরুন’ ছাড়া অন্য কোনো উপাধি তাঁর সঙ্গে মানানসই নয়, এমনটাই ভাবছিলাম। তিনি ও তাঁর বউমা বানান পুতুলগুলি। তাঁদের হাতেও তৈরি হয় হাতি ঘোড়া, কিন্তু সে আকৃতি আমাদের চেনা টেরাকোটার হাতি ঘোড়ার মত নয়। দাম জানতে চেয়েছিলাম, বললেন দু টাকা। শুনে অবাক হই। ওঁরা বলেন “এগুলো ওই ছোট বাচ্চারা নিয়ে যায়, খেলবে বলে। বেশি দাম কী করে রাখি?”

ব্র্যান্ডিংয়ের উল্টো মেরুর এক গল্প।

ঠাকরুনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম মজা করে “বয়স কত হল গো?” কাঁপা কাঁপা হাসিতে তিনি জবাব দিয়েছিলেন “বয়সের হিসাব কষে কী করব, বাবা?”

বাজারসর্বস্ব পৃথিবীতে তাঁর শিল্প অচল। সাবিত্রী তাই দাওয়ায় বসে বসে হিসাব কষতেও ভুলে যান।

তথ্যসূত্র

১. Susan S. Bean, “The Unfired Clay Sculpture of Bengal in the Artscape of Modern South Asia,” Companion to Asian Art and Architecture, R. Brown and D Hutton, ads, Pp. 604-628 (2010).
২. Ibid.
৩. Ibid.
৪. সুস্মিত হালদার, ‘অনাদর আর উপেক্ষায় ম্লান কৃষ্ণনগরের গরিমা’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১ জুলাই ২০১৪।
৫. ঐ
৬. যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, ‘লোহার ব্যথা’, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কাব্যসংগ্রহ, সুনীলকান্তি দাস সম্পাদিত, পৃষ্ঠা ১২৭-১২৮, ভারবি, প্রথম সংস্করণ (মাঘ ১৪০৬; জানুয়ারী ২০০০)। কবিতাটি মরুশিখা (১৯২৭) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
৭. রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘ভ্রাম্যমাণের দিনপঞ্জি’, পিতৃস্মৃতি, পৃষ্ঠা ১৬৮-১৭৯, জিজ্ঞাসা, প্রকাশ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৬৭ (১৯৬০)।

মতামত ব্যক্তিগত

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.