গত বছর প্রাইড মাসে এই ওয়েবসাইটেই একটা লেখা লিখেছিলাম। সেই কারণেই ভেবেছিলাম, এই লেখা শুরু করব গত এক বছরে এলজিবিটিকিউ সমানাধিকারের পথে আমার দেশ কতটা এগোল সেই নিয়ে।
কিন্তু সমস্যাটা হল, কোনো সামাজিক বিবর্তনই এক বছরে হয় না। সমাজের পরিবর্তন স্বভাবগতভাবেই মন্থর। এক বছরের ব্যবধানে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আকাশ-পাতাল কিছু পরিবর্তন হওয়ার আশা করা অনুচিত। কিন্তু ধীরগতির পরিবর্তনটুকুও ফিরে দেখা জরুরি।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
যে বছরটা পেরিয়ে এলাম, সে বছরই আমার দেশে করা সমীক্ষা বলছে, ভারতের ১৮% মানুষ নিজেদের নন-হেটেরোসেক্সুয়াল বলে চিহ্নিত করতে চান। আমার দেশের ৫৮% মানুষ সমলিঙ্গের সম্পর্কের আইনি স্বীকৃতি (বিবাহ বা সিভিল ইউনিয়ন) চেয়েছেন। আমার দেশের ৬৬% মানুষ সমপ্রেমী যুগলদের দত্তক নেওয়ার আইনি অধিকার চেয়েছেন। প্রত্যেকটা সংখ্যাই ২০১৬ সালে করা সমীক্ষার ফলাফলের চেয়ে অনেক বেশি। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের সমীক্ষায় মাত্র ৪০% ভারতবাসী সমলিঙ্গের সম্পর্কের আইনি স্বীকৃতির পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
এই অগ্রগতি খুব একটা অগ্রাহ্য করার মত নয়। নয় বলেই আজকের ভারতে কর্পোরেট জগতে সমপ্রেমী কর্মচারীদের সমানাধিকার দিতে, তাঁদের মনুষ্যত্ব উদযাপন করতে বহুজাতিক তো বটেই, জাতীয় সংস্থাগুলোও বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করছে না।
তার মানে কি আমরা হাত গুটিয়ে বসে সমানাধিকারের জন্য অপেক্ষা করব? না!
বরং এটাই লড়াই করার সবথেকে ভাল সময়, কাজে নামার উপযুক্ত সময়। এলজিবিটিকিউ জনগোষ্ঠীকে এখন নিজেদের দৃশ্যমানতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। শুধু রামধনু রংয়ের ওড়না হাতে রাজপথে মিছিল করলেই চলবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল সমপ্রেমী বা রূপান্তরকামী মানুষগুলোকে এই আন্দোলনের পুরোভাগে নিয়ে আসতে হবে। আইআইএম-এ পাঠরত সমপ্রেমী ম্যানেজমেন্ট শিক্ষার্থীর গল্পটা যেমন বলতে হবে, বলতে হবে মফস্বলের হাসপাতালে কর্মরতা সমপ্রেমী ডাক্তারদিদির গল্পও। এমন অনেক গল্প শোনার পরে হয়ত একদিন আপনার বাড়ির কাজের মাসি তার বান্ধবীর সাথে আপনার আলাপ করিয়ে দেবার সাহস পাবে।
কেন? তার কারণ মানুষ তথাকথিত সফল মানুষগুলোকেই অনুসরণীয় বলে মনে করে। যে সমপ্রেমী কিশোর কিশোরীরা সমাজের প্রান্তে বসবাস করে, তাদের কাছে এই সাফল্যের কাহিনীগুলো শুধু অনুপ্রেরণা নয়। হয়ত একজন সফল সমপ্রেমী মানুষের কথা শোনার পর সেই প্রান্তিক এবং সমপ্রেমী মানুষটি আত্মহননকেই আর একমাত্র পথ বলে মনে করবে না।
আরো পড়ুন প্রাইড, প্রেম, প্রতিকূলতা – আর তৎসম্পর্কিত গুটিকতক বক্তব্য
এত বড় কথাটা কী করে বলছি?
তার কারণ আমি সমাজ মাধ্যমে আমার সীমিত পরিচিতির সূত্রে প্রায়ই এরকম ইমেল বা ফোন পেয়ে থাকি। আমার চেনা অনেক সফল সমপ্রেমী মানুষেরই একই অভিজ্ঞতা হয়।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। নিঃসন্দেহে ২০২১ সাল সাম্প্রতিক ইতিহাসে ভারতের এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের সামাজিক সমানাধিকারের নিরিখে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু ২০২২ সাল যদি তার চেয়েও ভাল না হয়, তাহলে চলবে না। প্রাইড মাস ২০২২-এ দাঁড়িয়ে, এগিয়ে চলাই হোক একমাত্র লক্ষ্য।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।