শান্তনু ব্যানার্জী
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর (বাবা) শতাধিক বছরের প্রাচীন পৈতৃক বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আলি আকবর খাঁ এখানে বাবার নামে একটি সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্র (সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন) গড়ে তুলেছিলেন। বাড়ির মধ্যেই এক সংগ্রহশালায় আলাউদ্দিনের ব্যবহৃত বহু বাদ্যযন্ত্র, চিঠিপত্র, স্মারক, অসংখ্য ছবি ইত্যাদি রাখা ছিল। সে সবই বাইরের উঠোনে জড়ো করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন মৌলবাদী ইসলামিক সংগঠন এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির শক্ত ঘাঁটি। স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রকাশ্যেই কাজটা করে। তাদের স্লোগানের বক্তব্য ছিল; বাংলাদেশ একটি ইসলামিক দেশ; শরিয়া আইনে গান, বাজনা, নাচ এবং যাবতীয় ললিতকলা নিষিদ্ধ। ইসলামিক সমাজে হিন্দু শিল্পসংস্কৃতি চলবে না ইত্যাদি। যদিও তখন আফগানিস্তানে তালিবানি শাসনের আপাত অবসান হয়েছে, মাদ্রাসার ছাত্ররা স্লোগান দেয় যে তারা সবাই তালিবান হবে, বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাবে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর গ্রামের এই বাড়িতেই বাবা আলাউদ্দিনের জন্ম। নিজেই লিখেছেন তাঁর জন্মসাল বাংলা ক্যালেন্ডারের ১২৬৮/৬৯ (জন্মসাল নিয়ে সামান্য বিতর্ক আছে) সনের আশ্বিন মাস, দুর্গাষ্টমীর দিন ব্রাহ্মমূহূর্তে। আলাউদ্দিনের বাবার নাম সাধু খাঁ, মা হরসুন্দরী। সাধু আর হরসুন্দরী প্রথম সন্তানটির নাম রেখেছিলেন মধুমালতী। আলাউদ্দিন এঁদের চতুর্থ সন্তান। সাধু খাঁ নিজেই দক্ষ সেতার শিল্পী ছিলেন। আলাউদ্দিন অতি শৈশবেই মায়ের কোলে বসে বাবার সেতারের গৎ গুনগুন করতেন আর মায়ের বুকে তবলা বাজাতেন। আলাউদ্দিনের ঠিক উপরের দাদা আফতাবউদ্দিনকে তবলা শেখাতে আসতেন স্থানীয় ওস্তাদ রামকানাই শীল। এঁর বড় ভাই রামধনের কাছে শিখেছিলেন বেহালা আর কণ্ঠসঙ্গীত। চার পাঁচ বছর বয়সেই আলাউদ্দিন তবলায় ঠেকা দেওয়া শিখে যান।

আলাউদ্দিন বলছেন শিবপুরের শিব, যাঁর নামে গ্রাম, অত্যন্ত “জাগ্রত দেবতা। সব মানস পূর্ণ হয়”। হিন্দু-মুসলমান যেই হোক, বাগানের প্রথম তরকারি, নতুন গাইয়ের দুধ আগে শিবকে দিত। শিববাড়িতে তাঁরা খেলতেন। সবাই বলত শিবও খেলতেন তাঁদের সঙ্গে, কিন্তু তাঁকে চেনা যেত না। সাধুরা সেখানে গাঁজা খেত, গান করত, সেতার বাজাত। বাবা আলাউদ্দিনের নিজের কথা একটু শুনে নেওয়া যাক:
“আমার শিশুকাল থেকেই সাধু সন্ন্যাসী ভাল লাগত। মা আমাকে ইস্কুলে পাঠাতেন আর পাঁচটা ছেলের সঙ্গে, বগলে বই নিয়ে বেরতুম। চলে যেতুম শিববাড়ি। সেতার শুনি, আবার ছেলেদের সঙ্গে বাড়ি ফিরি। … একদিন হেড মাস্টার এসে নালিশ করলেন তোমার ছেলে ও ইস্কুল যায় না। … বাবা তাই শুনে, গিয়ে দেখেন – সাধু সেতার বাজাচ্ছে, আমি ঠেকা দিচ্ছি। দাদার শুনে যা শিখেছি। বাবা ফিরে এসে (মাকে) বললেন, শিববাড়িতে ঠেকা দিচ্ছে এক মহাত্মা সাধুর সঙ্গে; ওকে তুমি মেরো না”।

এইখানে একটু থেমে গতায়াতের বিষয়টা খোলসা করে নেওয়া যাক। গতায়াত বা যাতায়াত কথাটা খুব সহজ করে বললে সংস্কৃতির আদান-প্রদান। শিবপুর গ্রামের ছবিটিতে হিন্দু-মুসলমান সামাজিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এতটাই অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে আছে, তা নিছক আদান-প্রদান, বিনিময়ে (exchange) আটকে নেই। রীতিমত এ ঘর ও ঘরের যাতায়াত। সম্পর্কটাকে জৈবিক (organic) বললে বাড়িয়ে বলা হয় না। আলাউদ্দিন নট বা বাদক বংশের সন্তান। ধর্মে মুসলমান হলেও নটদের মধ্যে হিন্দু আচার-বিচার নিয়ে কোনো সংস্কার নেই। যদিও আলাউদ্দিনের ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে ইসলাম ধর্মের আচারগুলো সারাজীবন পালন করে যাওয়া থেকে এই সিদ্ধান্তে আসতে অসুবিধা হয় না যে এ তাঁর ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারের উত্তরাধিকার। ধরে নেওয়া যেতে পারে সঙ্গীতের মতই এটিও তিনি পারিবারিক পরিবেশ থেকেই পেয়েছিলেন। এই মুসলিম পরিবারের বধূর নাম হরসুন্দরী, একমাত্র কন্যা মধুমালতী খাতুন। মাইহারের রাজা রোশেনারা খাতুনের নাম বদলে অন্নপূর্ণা রাখলে আলাউদ্দিন তা স্বাভাবিকভাবেই সাদরে গ্রহণ করেন। এরপর আলাউদ্দিনের বংশে পুত্র-পৌত্রাদিক্রমে একে একে আসতে থাকেন আশিস, ধ্যানেশ, প্রাণেশ প্রমুখ। ইসলামিক চান্দ্রমাসে নয়, আলাউদ্দিনের জবানীতে পাচ্ছি আশ্বিন মাসে তাঁর জন্ম। তার উপর দুর্গাষ্টমী, আবার ব্রাহ্মমুহূর্ত।

শিবপুর গ্রামের শিবকে রাজা কৃষ্ণকিশোর চৌধুরী নিজের গ্রামে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। পাঁচশো হাতি নাকি নাড়াতে পারেনি ঠাকুরকে। শিব স্বপ্নে জানালেন ওই গ্রাম থেকে তাঁকে সরানোর চেষ্টা যেন না করা হয়। অগত্যা কৃষ্ণকিশোর শিবপুরেই মন্দির তৈরী করে দেবত্র সম্পত্তি করে দিলেন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে তাঁকে উপহার দিতে থাকলেন, আর শিব ছদ্মবেশে বাচ্চাদের সঙ্গে খেলে বেড়াতে লাগলেন। গ্রামীণ শিবের এই গল্প আলাউদ্দিন করেছেন অতি পরিণত বয়সে, ১৯৫২ সালে শান্তিনিকেতনে এক আলাপচারিতায়।
দশ বছর বয়সে আলাউদ্দিন নিজের গ্রামের পরিবেশ ছাড়িয়ে সংস্কৃতির রাজপথে বেরিয়ে পড়েন। ব্যক্তি আলাউদ্দিনকে বুঝতে গেলে এই রাজপথটি চেনা দরকার। আলাউদ্দিনের আন্তর্জাতিক পরিচিতি উত্তর ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের শিল্পী এবং শিক্ষক হিসাবে। যে পথে সেদিন দশ বছরের বালকটি নেমেছিলেন সে কোনো মুষ্টিমেয় অভিজাতের চলার রাস্তা নয়, ভারতের অধিকাংশ মানুষ অর্থাৎ গ্রামীণ মানুষের সংস্কৃতির রাজপথ। আলাউদ্দিন যোগ দেন যাত্রাদলে। এই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন, পাঁচালি প্রভৃতি গানের সঙ্গে পরিচিত হন।
বাংলা সংস্কৃতির এই ভুবনটির সঙ্গে সামান্য পরিচয় দরকার। মুঘল যুগে শরিয়াপন্থী রক্ষণশীল ইসলামের সমান্তরালে উদার সুফিবাদেরও প্রসার ঘটে। সুফি দর্শনের প্রতি মুঘলদের মিশ্র মনোভাব ছিল। কাদিরিয়া সুফিদের “অস্তিত্বের ঐক্যের” (ওয়াহদাত-উল-ওয়াজুদ) দার্শনিক চিন্তার অনুগামী ছিলেন আকবর, আবুল ফজল। দারাশুকো কাদিরিয়া সুফি সাধক মিঞা মীরের কাছে দীক্ষিত হন। জাহানারা ছিলেন চিশতি দর্শনের অনুগামী। মুঘলদের কিছুটা আনুকূল্যে এবং ইসলামের প্রসারের গতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সুফি দর্শন ছড়িয়ে পড়েছিল। আরব, পারস্য থেকে আসা উচ্চবর্গীয় আশরাফ মুসলিমদের সঙ্গে ধর্মান্তরিত স্থানীয় আতরাফদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ফারাক ছিল বিপুল। বাংলার অধিকাংশ মুসলমান ছিলেন গ্রামে বাস করা আতরাফ যাঁদের আরবি, ফারসি ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে বিন্দুমাত্র পরিচয় না থাকায় ইসলামিক শাস্ত্র বা আরবি, ফারসি সাহিত্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। অনেক বেশি সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁরা রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি বাংলার চিরাচরিত সাহিত্যের সঙ্গে। বাংলার মুসলিম পদসাহিত্যের সম্ভারে বৈষ্ণব দর্শনের গভীর প্রভাব একটি স্বীকৃত সত্য। আতরাফ মুসলিমরা নিজস্ব অস্তিত্বরক্ষার তাগিদেই পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিতে লগ্ন হয়ে ছিলেন। সুফি দর্শনের উদার মরমীয়াবাদ ঠিক এখানেই বাংলার গ্রামের মুসলিম জনগোষ্ঠীর হৃদয় স্পর্শ করেছিল। বাউল, জারিগান ইত্যাদি হয়ে উঠেছিল সুফি, বৈষ্ণব দর্শন, পৌরাণিক কাহিনীর সমন্বয়ের অন্যতম মাধ্যম।
হিন্দু-মুসলমানের সবচেয়ে সহজ যুক্ত সাধনার প্রকাশ বাংলার বাউলদের মধ্যে। চিশতি-সুরাবর্দী-কাদিরি-নক্সবন্দী সুফিরা বাংলায় এসে হিন্দু মুসলমান পণ্ডিতদের কাছে ব্রাত্য হয়েই ছিল। তারা মিলেছে প্রাকৃত হিন্দুদের, বিশেষ করে গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের সঙ্গে। তাই বাউলদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ভেদ নেই। হিন্দুর শিষ্য মুসলমান, মুসলমানের শিষ্য হিন্দু — এমন করে পরম্পরা নেমে এসেছে। আগমনী, দোল, চড়ক, নীল, গম্ভীরা এমন সব উৎসবে শিব-পার্বতীর গানে অসংখ্য মুসলমান বাউলের রচনা পাওয়া যায়। মুসলমান বংশে জন্মানো মদন বাউলের নীলের গান, গোলাম মৌলার আগমনী, শেরশাবাদীদের গম্ভীরা ক্রমশ বিস্মৃতির পথে চলেছে। বাউলদের পথ ধরেই দরবেশ, সাঁই, কর্তাভজা, আউল প্রভৃতি সম্প্রদায় চলেছে। লালন, পঞ্জু, দুদ্দু প্রমুখের গান, নাম সৌভাগ্যক্রমে আজও অন্তরালে চলে যায়নি। জারিগান কারবালা হত্যাকান্ডের স্মৃতিতে দুঃখের লোকগান। বাংলার জারিগান সুফি-বাউলদের গানের মতোই হিন্দু-মুসলমান প্রাকৃত জনের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। ঢোল, সানাই, হারমোনিয়াম, তবলা, খঞ্জরি নিয়ে জারি নাচগানের অনুষ্ঠানে মানুষ দলে দলে আসতেন। কারবালা বদলে যেত পলাশীর হত্যাকান্ডে; ঔপনিবেশিক শোষণবিরোধী কৃষক বিদ্রোহ, এমনকি অসহযোগ–খিলাফত আন্দোলনও উঠে এসেছিল জারিগানে। এমনকি বাংলার ফকিরি তত্ত্বে (সুফি দর্শনে) পয়গম্বরের কন্যা ফতিমা বিবিকে (মা বরকত) বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। হিন্দুরা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের যুগে সঙ্কট থেকে উদ্ধারের আশায় শক্তির দেবী মা কালীর উদ্দেশ্যে গান রচনা করে সান্ত্বনা খুঁজত; মুসলিমরাও তাদের মা কালীকে খুঁজে পেয়েছিলো ফতিমা বা মা বরকতের (পবিত্র মা) মধ্যে, যিনি কেয়ামতের পর সব মানুষকে আল্লার কাছে শেষ বিচারের জন্য আনা হলে তাদের উদ্ধারের জন্য আল্লার কাছে দয়া ভিক্ষা করবেন। শিবপুর গ্রামের কৌম পরিবেশ, জারি, বাউলের মধ্যে বেড়ে ওঠা আলাউদ্দিনের পক্ষেই তাই এমন উচ্চারণ সম্ভব “আমি হিন্দুও না মুসলমানও না, আমি ম্লেচ্ছ।”
আলাউদ্দিন বাউলদের মত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে অবিশ্বাসী ছিলেন না। মাইহারের দেবী শারদা, সরস্বতী ঠাকরুণ, কাশীর সঙ্কটমোচনের হনুমান মায় রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ — সবার প্রতি তাঁর অগাধ ভক্তি ছিল। পুরোহিত ডেকে সরস্বতীপুজো করে অঞ্জলি দিতেন। দীর্ঘ অসুস্থতার সময় হাসপাতালে শুয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, অন্য কোথাও না, শারদা মায়ের পায়ের তলায় তিনি মরতে চান। দুই ধর্মের এক অপূর্ব গতায়াতে এই একই বাবা আলাউদ্দিন ভোর চারটেয় উঠে প্রথম নমাজটি পড়তেন এবং সারাদিনে নিষ্ঠা ভরে বাকি চার ওয়ক্ত। তানসেন মিউজিক কনফারেন্সে তবলাবাদক হীরেন্দ্রকুমার গঙ্গোপাধ্যায় সারারাত বাবার (আলাউদ্দিন) সঙ্গে সঙ্গত করেছেন। বিরতি পর্বে চারটের সময় উঠে বাবা একা একটি ঘরে নমাজ পড়তে গেলেন। হীরুবাবু দেখলেন, “…. an exceptional, almost divine aura surrounding the great musician as he prayed”. জুম্মাবারে তিনি বাজাতেন না। সারা জীবন কাবা শরীফে যাওয়ার ইচ্ছা লালন করেছেন। যাওয়া হয়ে ওঠেনি। উদয়শঙ্করের দলের সঙ্গে জেরুজালেমে গিয়ে সরোদ বাজিয়েছিলেন। সেখানকার এক আশ্চর্য কাহিনী শুনিয়েছেন আলাউদ্দিন। হোটেল থেকে একাই বিখ্যাত আল আকসা মসজিদের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। পথ চেনেন না। পিছন থেকে হঠাৎ একজনের ডাক শুনতে পেলেন। আরবি না জানায় কিছুই বুঝতে পারলেন না। সেই মানুষটি তখন তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলার ইঙ্গিত করেন। কিছুদূর যাওয়ার পর মানুষটি ডানদিকের একটি পথ দেখিয়ে অকস্মাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। সামনেই মসজিদ। আলাউদ্দিন কাঁদতে থাকেন; আল্লা স্বয়ং তাঁকে পথ দেখিয়ে এনেছেন! ছদ্মবেশে শিব তাঁর সঙ্গে খেলেন, আল্লা পথ দেখিয়ে চলেন। এই উপরওয়ালাকেই আলাউদ্দিন সারাজীবন বিশ্বাস করে গেছেন।
আলাউদ্দিন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অন্দরমহলের মানুষ। ভারতীয় মার্গসঙ্গীতে প্রাক-মুসলিম যুগের শুদ্ধ রূপ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রাচীন যুগের কলকাঙ্গী ঠাট এখন অচল, এখন চলে মুসলমানদের প্রবর্তিত বেলাওলি ঠাট। ত্রিতন্ত্রী বীণাকে সেতারের রূপ দেন আমীর খুসরৌ। রবাব, সুরশৃঙ্গার, সুরবাহার প্রভৃতি তন্ত্রীবাদ্য ভারতীয় সঙ্গীতে মুসলমানদের উপহার। প্রাক-মুসলিম যুগের বহু দীর্ঘ তালের বদলে কাহারবা, দাদরা প্রভৃতি আট মাত্রা, ছয় মাত্রার ছোট তাল তৈরি হয়। ইমন, বাহার, কাফি, মারু, পিলু, ঝিঁঝোটি, আলাইয়া, সরফরদা, সাজগিরি, আড়ানা, সোহিনী জৌনপুরী, টোড়ী মূলত পারস্য থেকে এসেছিল। পারস্যের অবিকৃত রূপটিও ওস্তাদরা রাখেননি। যে সব দেশি সুর পন্ডিত মহলে কল্কে পেত না, মুসলিম ওস্তাদরা নবাগত রাগগুলির সাথে সেগুলিকে মিলিয়ে ধ্রুপদ, ঠুংরি, খেয়াল এইসব নতুন গায়নরীতি সৃষ্টি করেন। ভারতীয় সঙ্গীতের চরিত্র এতটাই মিশ্র যে এখানে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করলে সঙ্গীতের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ে।

উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জগতে ঘরানা অনেক পরে ভাগাভাগি হলেও ধর্ম সেখানে বড় কোনো পাঁচিল তুলতে পারেনি। এমন তত্ত্ব অবশ্য আছে যে ঘরানার বিশুদ্ধতা রাখার জন্য মুসলিম ওস্তাদরা নিজেদের কাছে পিঠে আত্মীয়দের মধ্যে ছেলেমেয়েদের বিয়ে শাদী করাতেন। ঘরের বিদ্যা বাইরে যেতে দিতে চাইতেন না। সবটা বোধহয় এরকম নয়। বাংলা ভাষায় প্রথম আত্মজীবনী রচয়িতা, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাবা দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায় তালিম নিয়েছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার ওস্তাদ হদ্দু খাঁর কাছে। জয়পু্র-আতরৌলি ঘরানার ভাস্করবুয়া বাখলে, কেশরবাঈ কেরকর, মঘুবাঈ কুর্দিকর নক্ষত্র হয়েছিলেন ওস্তাদ আল্লাদিয়া খাঁর তালিমে। কিরানা ঘরানার ভীমসেন যোশীর গুরু সওয়াই গন্ধর্ব ছিলেন ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁর ছাত্র। উদাহরণ অনন্ত। সেনিয়া-রামপুর ঘরানার উজির খাঁর গান্ডাবাঁধা শিষ্য হয়েও আলাউদ্দিন ঘরানার বিশুদ্ধতায় বিশ্বাসী ছিলেন না। শেষ বয়সেও পিতা সাধু খাঁর গৎ বাজাতেন। উজির খাঁর আগে নুলো গোপাল, হাবু দত্ত, আহমদ আলির শিষ্যত্ব করেছেন বলে সম্ভবত নিজেকে কোনো ঘরানার উত্তরসূরী মনে করতেন না। যে ঘরানার তিনি নিজেই সৃষ্টিকর্তা সেখানে অন্নপূর্ণা দেবী, আলি আকবর খাঁ, বাহাদুর খাঁ, আশিস খাঁ এই কজনের পারিবারিক বৃত্তের বাইরে নক্ষত্রপ্রতিম শিষ্যমন্ডলী গড়ে তোলেন: রবিশঙ্কর, নিখিল ব্যানার্জী, তিমিরবরন ভট্টাচার্য্য, শরণরাণী, যতীন ভট্টাচার্য্য, পান্নালাল ঘোষ, অমরদেব (ডন আলবার্ট পেরেরা), রবিন ঘোষ, নলিন মজুমদার প্রমুখ।

সঙ্গীত এমন একটা ক্ষেত্র যার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম নেই বা ধর্ম নির্মাণ করা যায় না। সঙ্গীতের ধর্ম সঙ্গীত। চিত্রকলা, স্থাপত্যের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের বিরাট ঐতিহ্য রয়েছে। আবার নির্দিষ্ট ধর্মের নির্দিষ্ট শৈলী – এই জাতীয় কৃত্রিম ভাগাভাগি আরোপের চেষ্টাও দুর্লভ নয়। ফোক, ক্লাসিকাল — সঙ্গীতের দুই ধারার মধ্যে সমন্বয়ের ঐতিহ্য এত গভীরে প্রোথিত যে তাকে ভিতর থেকে ভাঙা সম্ভব না। তাই বাইরে থেকে চলে এলোপাথাড়ি আক্রমণ। ২০১৬ সালের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা উপমহাদেশে কোনো ব্যতিক্রম নয়। ঠিক তার আগের বছর মুম্বইয়ে গুলাম আলির গজলের অনু্ষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছিল শিবসেনার হুমকিতে। নীচের তলায় চুঁইয়ে নামছে আক্রমণ। বাংলাদেশে জারিগান শুরু হত একইসঙ্গে সরস্বতী ও ফতিমা বিবির বন্দনা দিয়ে। শোনা যাচ্ছে সরস্বতী বন্দনা আজকাল আর করতে দেওয়া হচ্ছে না। সুন্দরবনে যিনি হিন্দুদের পরাণ মন্ডল তিনিই মুসলমানের কালু গাজী। দরিয়ার পীর তিনি। তাঁর নির্দেশে পাশাপাশি ওলাবিবি, দক্ষিণরায়ের থান বসে। দুজনেরই পাঁচালীগান হত। এখনো সে ঐতিহ্য বহমান তো? কাছাকাছি বেঁধে বেঁধে থাকার গ্রামীণ কৌম চেতনা (community consciousness) কী করে বদলে যায় বিচ্ছেদের সাম্প্রদায়িক চেতনায় (communal consciousness)?
আর একটু পিছন ফিরে দেখলে বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে উনিশ শতকের মাঝ বরাবর সময়টা বেশ গোলমেলে। এর একটু আগে থেকেই পশ্চিমী শিক্ষার বিস্তার, উপরতলায় খানিকটা সাক্ষরতা বৃদ্ধি, মুদ্রণ সংস্কৃতির প্রসার, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, সারা দেশকে একই অর্থনীতির (এক বাজার, এক মুদ্রা) ছাতার তলায় নিয়ে আসায় ভারতে একটা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি জন্ম নিচ্ছিল। ভারতে সাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম ব্রিটিশরা আসার আগে নয়। ব্রিটিশরা ভারতের বিভিন্ন ধর্মগুলিকে এক একটি আলাদা বর্গ (category) হিসেবে কল্পনা করেছিল। সেগুলির অন্তর্লীন মিল, সমন্বয়ের সত্য ইত্যাদিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়। নিতান্তই ঔপনিবেশিক স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে তারা এক একটি ধর্মকে মিত্রপক্ষ বানিয়ে, অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবহার করে চতুর ভারসাম্যের খেলা খেলেছে। জেমস মিলের History of British India (১৮১৭) এই নব্যশিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানসে গভীর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে এর কালানুক্রমের ধারণাটি (periodisation)। হিন্দু, মুসলমান, ব্রিটিশ — এই তিন যুগে ভারতের ইতিহাসকে বিভাজিত করা হয়। তার ওপর এই সময়টাই আবার জাতিকল্পনার যুগ। মুসলমানরা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পড়েছে। পশ্চিমী শিক্ষা আত্তীকরণ করছে হিন্দু মধ্যবিত্ত। তাদের জাতিকল্পনা রাজনৈতিক স্বাধীনতার চেয়েও অনেক বেশি বলে এক সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের কথা। হিন্দুদের কুসংস্কারের যে তীব্র নিন্দা মিল করেছিলেন, প্রথম যুগের জাতীয়তাবাদী চিন্তকরা সেটি গলাধকরণ করেছিলেন। তবে তাঁদের কাছে এটা ছিল ‘হিন্দু’ ভারতের অবক্ষয়; বর্বর ‘মুসলমান’ যুগই হল খলনায়ক। ‘গৌরবময় হিন্দু’ যুগে ফেরার এই আকাঙ্খাই জাতিকল্পনার আদি পর্বকে পুরোপুরি হিন্দু পুনরুত্থানবাদী চরিত্র দিয়েছিল। সেখানে মুসলমানের জায়গাই নেই। ‘বন্দেমাতরম’, ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’ ইত্যাদি গান, ‘ভারতমাতা’ ছবি কি আদৌ বেঁধে বেঁধে থাকার কৌম চেতনার চিহ্ন বহন করে? ভারতের জাতীয়তাবাদের চেতনার শুরুতেই তো তাই মস্ত ফাটল। গোলমালের শেষ এখানেই নয়। জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ, পশ্চিমের ইতিহাস, রাজনৈতিক দর্শন আত্তীকরণ করায় ভারতবর্ষের রাজনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। সেটি হল সংগঠিত রাজনীতির উত্থান। এই রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রচারধর্মিতা (propaganda) ও বিক্ষোভ (agitation)। সংগঠিত রাজনীতির প্রচার শ্রেণি রাজনীতির অভিমুখে গেলে একরকম ফল পাওয়া যায়। আবার বিশেষ ধর্মীয় পরিচয়কে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার বা বিক্ষোভ আন্দোলন চললে তা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আকার নিয়ে কৌম সমাজেও ফাটল ধরিয়ে দিতে পারে। আপাতভাবে অনড়, নির্দিষ্ট আদর্শে স্থিত কোনো মানুষ বা সমাজকে তার অজ্ঞাতেই প্রচারের ইন্দ্রজাল সম্পূর্ণ বিপরীত একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে পারে।
আরো পড়ুন সুরধ্বনির অভিযান
আলাউদ্দিনের চেতনার কেন্দ্রে ছিল শৈশবের শিবপুর গ্রামের কৌম সমাজ। মধ্য বয়সে লোকবিরল, গাছপালায় ঘেরা, শেয়াল ডাকা, সাপ চরা, ম্যালেরিয়াসঙ্কুল নামমাত্র শহর মাইহারে তার কিছুটা প্রতিরূপ খুঁজে পেয়েছিলেন। মাইহারে তিনি সবার বাবা, সকলের প্রণম্য। পুরোহিত বাড়িতে সরস্বতীপুজো করে যান, ৫৫৭ টা সিঁড়ি বেয়ে উঠে শারদা দেবীকে পুজো করে আসেন। শিবপুরের শিব আর মাইহারের মা কালী কি ওস্তাদের কাছে একাকার হয়ে গিয়েছিল?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুর, বা মধ্যপ্রদেশের মাইহার এখন যথাক্রমে উগ্র ইসলাম আর হিন্দুত্ববাদীদের হাতে। আলাউদ্দিনের শৈশবের কৌম সমাজ স্বাভাবিক নিয়মেই অন্তর্হিত হয়েছে, এসেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সমাজ। সংগঠিত রাজনীতির অভিমুখ যদি পুরনো গ্রামীণ সমাজগুলোর বৈষম্য দূর করে সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাটুকু করে, ম্লেচ্ছ আলাউদ্দিনের অনুগামীরা আনন্দ পাবেন।
এই পর্যন্ত লেখার পর আলাপ হয় শিবপুরের সন্তান জুনাঈদ তাজবীনের সঙ্গে। সে শিবপুরের সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিল। জুনাঈদের পাঠানো ছবি থেকে জানলাম আলাউদ্দিন খাঁর বড় ভাই দক্ষ বাদক, সাধক আফতাবউদ্দিনের একটি মাজার শিবপুরে রয়েছে। শিবপুরের সেই শিবমন্দিরটি একটি নাটমন্দিরসহ তার গ্রামীণ রূপটি নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। মন্দিরের চারপাশে উঁচু পাঁচিল, সোলার লাইট ইত্যাদি আধুনিক ব্যবস্থা করেও তার গ্রাম্য আদলটিকে বজায় রাখা হয়েছে, দেখে মনে হবে বালক আলাউদ্দিন সাধুদের সঙ্গে সদ্য তবলা বাজিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

শিবপুরের ঘটনা দিয়ে শুরু করেছিলাম, ওখানেই ফিরতে হবে শেষে। শিবপুরের সদ্য তরুণ জুনাঈদ নিজেকে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর গ্রামের ছেলে বলতে গর্ববোধ করে। যারা আলাউদ্দিনের ভিটে, গানের স্কুলটি পুড়িয়েছে তাদের সম্পর্কে তার স্পষ্ট বক্তব্য, সুন্দর সঙ্গীত “মানুষকে মননশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে। সঙ্গীতাঙ্গনের বিপক্ষ শক্তিকে সমর্থন করতে পারি না।” জুনাঈদ না জানালে অজানাই থেকে যেত, শিবপুরে আলাউদ্দিনের নামে অত বড় মহাবিদ্যালয়টির অস্তিত্বের কথা। নট বংশের সন্তান, বাদক সাধু আফতাবউদ্দিনের মাজারটি গ্রামবাসীর তীর্থস্থান। শিবপুরের শিব আজও জাগ্রত। আলাউদ্দিনের পৈতৃক বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার পর সংস্কার করে গানবাজনার স্কুলটি আবার চালু হয়েছিল। অতি সম্প্রতি দ্বিতীয় আঘাতটি আসে। একুশ সালের মার্চে মোদীর ঢাকা সফরের আক্রোশে আবার আক্রমণ, আবার অগ্নিসংযোগ। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও খুব অল্পদিনেই সঙ্গীতাঙ্গন আবার গড়ে উঠেছে। স্কুল চলছে, অনুষ্ঠানও হচ্ছে। যতবার মারছে ততবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পুড়িয়ে দেওয়া সত্য, কিন্তু শেষ সত্য নয়। ফিনিক্সের মত পুড়েও মরে না, ভস্মের মধ্যে থেকে নতুন জীবন নিয়ে জেগে ওঠে।
“এখনই অন্ধ বন্ধ কোরো না পাখা”।

অলঙ্করণ: অনুরাগ দত্ত
তথ্যসূত্র
১। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের আশুতোষ অধ্যাপক ডঃ অমিত দে দূরভাষে একটি মূল্যবান সাক্ষাৎকার দিয়ে বিশেষভাবে ঋণী করেছেন। শিবপুর নিবাসী জুনাঈদ তাজবীন তার গ্রামের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাম্প্রতিক কিছু ছবি পাঠিয়েছে। এছাড়াও তার দেওয়া সঙ্গীতাঙ্গন সম্পর্কিত তথ্য, গভীর কিছু মন্তব্য লেখাটির মোড় ঘোরাতে সাহায্য করেছে। জুনাঈদের প্রতি কৃতজ্ঞতা অপরিসীম।
২। ক্ষিতিমোহন সেন — ভারতে হিন্দু- মুসলমানের যুক্ত সাধনা।
৩। Amit Dey — The Image of Prophet in Bengali Muslim Piety (1850-1947).
৪। Asim Roy — The Islamic Syncretistic Tradition in Bengal.
৫। Suranjan Das — Propaganda and the Legitimization of Communal Ideology: Patterns and Trends in Bengal, 1905-1947 (Article).
৬। বাবা আলাউদ্দিন খাঁর আত্মজীবনী ছাড়াও অনেকগুলি জীবনীগ্রন্থ, স্মৃতিকথা বাজারে এবং ইন্টারনেটে সুলভ।
নিবন্ধকার পেশায় অধ্যাপক। আগ্রহের বিষয় ইতিহাস, রাজনীতি ও সঙ্গীত।
অলঙ্করণ শিল্পী অনুরাগ দত্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, ডিজিটাল পেইন্টার।
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।
[…] ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ: গতায়াতের ভুবন […]