সায়ক ঘোষ চৌধুরী
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (CMIE)-র সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট অনুসারে ভারতে ২০২২ সালের মে থেকে জুন মাসের মধ্যে কাজ হারিয়েছেন ১.৩ কোটি মানুষ। মে মাসে ভারতে ৪০.৩ কোটি উপার্জনকারী ছিলেন। জুন মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটিতে। গ্রামীণ ক্ষেত্রে রোজগার হারিয়েছেন ৮০ লক্ষ মানুষ, ২৫ লক্ষ মাস মাইনের মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। বাকিটা অসংগঠিত ক্ষেত্রে। ভারতে মোট কর্মহীন ৭.৮%। কর্মহীনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আসাম, হরিয়ানা এবং রাজস্থানে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানহীন রাজ্যগুলো হল বিহার, তেলেঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশ।
মূলত দেরিতে বর্ষা আসাকে দায়ী করা হলেও রাজ্যগুলোর কর্মসংস্থানের অবস্থা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, ভারতের কর্মসংস্থানের হার গত দশ বছর ধরেই উত্তরোত্তর খারাপ হয়েছে, এবং তার পিছনে নরেন্দ্র মোদী সরকারের শ্রম নীতির বিরাট অবদান। তার উপরে ক্রমাগত সরকারি সংস্থা বেচে দেওয়ার প্রবণতা ভারতের নির্মাণ ক্ষেত্রকে দুর্বল করেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ভারতীয় রেল ৩৯,০০০ রেলগাড়ির চাকা চীন থেকে আমদানী করার বরাত দিয়েছে। অবস্থা অনেকটা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতই। ভারত থেকে লৌহ আকরিক যাবে সারা বিশ্বে, চাকা তৈরী হবে, তারপর ভারতেই বিক্রি হবে।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
ভারতের আমদানি শুধু জুন ২০২২-এই ৫.৩ লক্ষ কোটি টাকায় গিয়ে পৌঁছেছে, যা সর্বকালীন রেকর্ড। রপ্তানি ৩.২১ লক্ষ কোটির। অর্থাৎ ঘাটতি দু লক্ষ কোটি টাকার বেশি। টাকার রেকর্ড দামের পতন সেই কারণেই। এই অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
একদিকে কোম্পানিগুলো কর্মী সংকোচন করে মুনাফা বাড়িয়ে শেয়ার মার্কেটে নিজেদের শেয়ারের দাম চড়িয়ে দেখাবে এবং ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলো থেকে টাকা নিয়ে তাদের দেউলিয়া করে ছাড়বে। অন্যদিকে কর্মী সংকোচন ভারতীয়দের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।
যেসব রাজ্যে কর্মসংস্থানের হার সামান্য ভাল, সেখানে কিছু হাইওয়ে, বড় বড় মল ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলো স্থায়ী কর্মসংস্থানের জায়গা নয়। সেতু ও হাইওয়ে (এবং বিমানবন্দর) তৈরির যে উন্নয়ন মডেল নরেন্দ্র মোদী সরকার আমাদের সামনে পেশ করেছে, তাতে পরিকাঠামোর বাহুল্যে ভারত অচিরেই শ্রীলঙ্কায় পরিণত হয়ে যাবে কিনা, সেই আশংকা থাকছেই।
এই সময়ে কতকগুলো প্রশ্ন তোলা দরকার।
(১) ভারতে নির্মাণের জোয়ার আনার জন্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগান এখন আর মোদীর মুখে শোনা যায় না কেন?
(২) ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও বিমানবন্দরগুলো আদানি গোষ্ঠীর হাতে কেন?
(৩) অগ্নিপথের মত প্রকল্প গ্রামীণ কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ক্ষতি করবে না? বিশেষ করে ইতিমধ্যেই যেসব রাজ্যে কর্মসংস্থানের অবস্থা খারাপ?
তৃতীয় প্রশ্নটা কেন করতে হবে একটু তলিয়ে দেখা যাক।
মোদী সরকার মনে করে, কারোর কাছে ১০-১২ লক্ষ টাকা পুঁজি থাকলেই সে স্বাধীন ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু ঘটনা তা নয়। মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটে যে ধরনের ছোট ব্যবসা করার সংস্কৃতি আছে, তা বাকি ভারতে নেই। সেক্ষেত্রে অগ্নিপথ প্রকল্পে সেনাবাহিনীতে কাজ করে অবসর নেওয়া ব্যক্তির টাকা ভুল জায়গায় খরচ হয়ে যেতেই পারে। তার উপর রোজগারের কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ ইতিমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর লোকেদের বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা করাই সম্ভব হয়নি। নতুনদের কী করে হবে?
আরো পড়ুন অগ্নিপথ: বেকারত্বের আগুন নেভাতে পারছে না জাতীয়তাবাদ
ভারতের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র মোদী সরকারের যে রূপ তুলে ধরছে, তা মোদী সরকারকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যমের তৈরি ভাষ্যের থেকে ঢের আলাদা। অর্থনীতির গভীর রোগকে প্রচারের মোড়কে ঢেকে রাখা হচ্ছে। যা একদিন না একদিন দৈত্যাকৃতি সংকট হয়ে দৃশ্যমান হবেই এবং সেদিন সবাইকে গেরুয়া পরিয়ে দিলেও অরাজকতা আটকানো যাবে না।
মতামত ব্যক্তিগত
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।