এশিয়ার প্রথম টায়ার কোম্পানি ডানলপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ইতিহাস করুণ। ২৪ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে ডানলপ কারখানা খুলে দেওয়ার জন্য আলোচনা হল এবং কারখানা খুলেও আবার বন্ধ হয়ে গেল। ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হল কিন্তু কারখানা খুলল না, এশিয়ার প্রথম টায়ার কারখানা ক্রমান্বয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকল। ২০১২ সালে প্রভিডেন্ট ফান্ড দপ্তর ডানলপের মালিকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অভিযোগ করল এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা আজও চলছে। ২০১৩ সালে হাইকোর্ট আদেশ দিলেন কারখানা বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ডানলপ শ্রমিকরা তাঁদের বকেয়া পাওনার জন্য আইনি যুদ্ধ শুরু করলেন। এদিকে ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার ডানলপ কারখানা অধিগ্রহণ করা হবে বলে ঘোষণা করলেন এবং ২৬ তারিখ ডানলপ অধিগ্রহণ বিল বিধানসভায় গৃহীত হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হল। কিন্তু এই আইনে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর ব্যাপারে একটি কথা উচ্চারিত হল না।

চন্দননগরের আইনি সহায়তা কেন্দ্র হাইকোর্টে শ্রমিকদের প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি দেবার জন্য মামলা করল। সেই মামলার শুনানিতে সরকারি উকিল কোর্টকে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ডানলপ অধিগ্রহণ করার প্রস্তাবিত আইনে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়ার বিষয়ে কোন কথা উচ্চারিত হয়নি [সূত্র: W.P. No. 30178(W) of 2016]। আইনি সহায়তা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করা হল ডানলপ অধিগ্রহণ বিলকে যেন দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হয় এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বকেয়া মিটিয়ে দেবার বিষয়টা যেন বিলে উল্লেখিত থাকে।

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি আই পি মুখার্জী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, প্রস্তাবিত ডানলপ অধিগ্রহণ বিল যেহেতু আইনে পরিণত হয়নি সেহেতু বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করে কারখানার সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের অর্থ মিটিয়ে দিতে হবে। লিকুইডেটররা ২০১৭ সালের ৮ মে কারখানার গেটে নোটিস ঝুলিয়ে ডানলপ কারখানার দখল নিলেন। কারখানার শ্রমিকদের পক্ষ থেকে লিকুইডেটরের কাছে ৪৪৩৫ জন শ্রমিকের সামগ্রিক বকেয়া সংক্রান্ত দাবি পেশ করা হল।

পুনরায় ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল কারখানার শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পাওনা দ্রুত মেটানোর জন্য দরখাস্ত করা হল। এর আগে ২০১৭ সালের ২৬ জুন এবং ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ডানলপ কারখানার লিকুইডেটরকে চিঠি দিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তারপর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত গতকালের খবর অনুযায়ী লিকুইডেটর অল্প কয়েকজন শ্রমিকের টাকা মিটিয়ে দেবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর, কারণ কারখানার শ্রমিকদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ীই মোট ৪৪৩৫ জনের অর্থ বকেয়া রয়েছে।

এমতাবস্থায় ডানলপ কারখানার শ্রমিকদের বকেয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের এই পরিণতির দায় এড়াতে পারেন না। যে সমস্ত শিল্পপতিদের হাতে ডানলপ কারখানার ভাগ্য সমর্পণ করা হয়েছিল তাঁদের কারখানা চালানোর সামান্যতম যোগ্যতা বা ইচ্ছা ছিল কিনা তা বুঝে নেবার ব্যাপারে সরকারি প্রচেষ্টা প্রশ্নচিহ্নের মুখে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে পরিবেশ দূষণ করার অপরাধে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শ্রমিকদের আর্থিক সমস্যার কথা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টকে জানালে আদালত নির্দেশ দেন, কারখানা বন্ধ থাকাকালীন সমস্ত বেতন মালিককে দিতে হবে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই সময়ে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তী ক্ষেত্রে রাজ্যের শ্রম দপ্তরকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তাদের নিস্পৃহ ভূমিকা দুর্ভাগ্যজনক। শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাস আজও ডানলপের আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়। তবু জেগে থাকে আশা। সহায়সম্বলহীন শ্রমিকরা আজও তাকিয়ে আছেন তাঁদের ফেলে আসা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া কারখানার দিকে, আর প্রতীক্ষায় রয়েছেন যদি কোনভাবে পাওয়া যায় বকেয়া অর্থ।

মতামত ব্যক্তিগত।

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

1 মন্তব্য

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.