গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভগৎ সিংয়ের জন্মদিন থেকে চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নাম তাঁর নামে রাখা হল। তাঁর ভাগনি গুরজিৎ কৌর ধাত। গুরজিতের মা বিবি পরকাশ কৌর ছিলেন ভগতের ছোট বোন। গুরজিতের সঙ্গে কথা বলল নাগরিক ডট নেট।

চণ্ডীগড় বিমানবন্দরের নাম বদলে ভগৎ সিংয়ের নামে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, সরকার চায় ভগতের আদর্শ আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিতে। তাঁর পরিবারের সদস্য হিসাবে আপনার কেমন লাগছে?

নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন

~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

আমি তাঁর পরিবারের সদস্য ঠিকই, কিন্তু সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তাঁর পরিবার এই দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষকে নিয়ে। তিনি গোটা দেশের শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষের আত্মার আত্মীয়, প্রাণের মানুষ। বিমানবন্দরের নাম যদি ভগৎ সিংয়ের নামে রাখা হয়, সে তো ভাল কথা। শহিদ-এ-আজমের পরিবারের পক্ষ থেকে আমি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। দেশের কোটি কোটি অনুরাগী এই সিদ্ধান্তে খুশি হবে। স্বাধীনতালাভের পর ৭৫ বছর কেটে গিয়েছে। এই সাড়ে সাত দশকে কত রংয়ের সরকারই তো মসনদে এল। কংগ্রেস বহুবছর রাজত্ব করল। বিজেপিও একাধিক দফায় দেশ চালিয়েছে। এই কাজটা আরও অনেক আগে করা উচিত ছিল। যাই হোক, কেন্দ্রীয় সরকারকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এই বিষয়ে আমি কি আরও দু-একটা কথা বলতে পারি?

নিশ্চয়! বলুন

ভগৎ সিং কেবল একজন ব্যক্তি নন। তিনি একটি বিচারধারার অংশ। সমাজতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। ভগতের স্বপ্নের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁকে সম্মান জানানো যায় না। একদিকে তাঁর নামে এয়ারপোর্টের নাম রাখব, অন্যদিকে তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করব, সেটা তো ভণ্ডামি,তাই না? টোকেনিজম কোনো সমাধান নয়। দেশের শাসকরা যদি ভগৎসহ লক্ষ বিপ্লবীর স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে চাইতেন, তাহলে তাঁরা এনআরসি করতেন না, সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করতেন না, কৃষকদের উপর জুলুম করতেন না। আমি মনে করি, ভগতের নামে এয়ারপোর্টের নাম দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো যায় না। তাঁকে সাম্প্রতিককালে প্রকৃত শ্রদ্ধা জানিয়েছে কৃষক আন্দোলন। তুমি তো সেই সময় গিয়েছিলে, নিশ্চয় দেখেছ শহিদ-এ-আজমের নাম কেমন করে কৃষকদের প্রাণিত করেছে, উদ্বেল করেছে। ভগৎ বেঁচে রয়েছেন সংগ্রামী মানুষের চেতনায়, তাঁর স্বপ্নের ভারতবর্ষ নির্মাণের চলমান প্রচেষ্টায়। এখানেই তাঁর প্রকৃত সম্মান।

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলছে। কেন ৭৫ বছরেও ভগৎ সিংদের স্বপ্ন সত্যি হল না?

এটা কঠিন লড়াই। দীর্ঘ লড়াই। আগে একটা কথা বলে নিই। ভগতের সিংয়ের রাজনীতি থেকে তাঁকে আলাদা করার একটা ভয়ংকর চেষ্টা চলছে। তিনি যেন কেবলই একজন বীর, একজন যোদ্ধা – এমনটা দেখানোর চেষ্টা চলছে। না, ভগৎ কেবল একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন না। তিনি একজন সমাজতান্ত্রিক চিন্তাবিদ ছিলেন। তিনি শ্রমিক-কৃষকের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন। তিনি চেয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ভারত। এই সবকিছুকে বাদ দিয়ে ভগৎকে বোঝা যায় না।

তাঁরা যে পথে লড়াই করেছিলেন, সেই পথে ভারতের স্বাধীনতা আসেনি। দেশটাকে টুকরো টুকরো করে, ইংরেজের শর্ত মেনে নিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। গোড়াতেই গলদ। তাই তাঁদের স্বপ্নের দেশ আমরা গড়তে পারিনি।

আরো পড়ুন ভগৎ সিং বিপ্লবী সমাজবাদী, শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী নন

কেবল বিজেপি নয়, এই দেশের দুর্গতির জন্য দীর্ঘ কংগ্রেস শাসনও দায়ী। দশকের পর দশক তারা দেশকে শাসন করেছে। জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়নি। প্রতিটি ঘরে শিক্ষার আলো যায়নি। বড়লোকরা আরও বড়লোক হয়েছে, পুঁজিপতিরা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এরপর বিজেপি এসে সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। মোদী সরকার তাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। কী করে তৈরি হবে ভগৎদের স্বপ্নের ভারত?

আগামী ভারতবর্ষ কেমন হবে? আদৌ কি ভগৎদের স্বপ্নের ভারত জন্ম নেবে অদূর ভবিষ্যতে?

আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। মিথ্যে স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে, আমি সেই স্বপ্ন দেখি। আমার অনেক বয়স। কিন্তু তুমি তো দেখেছ, তা সত্ত্বেও ছুটে ছুটে গিয়েছি কৃষক আন্দোলনের ময়দানে। কেন গিয়েছি জানো? ওখানে নতুন ভারতের জন্মের প্রস্তুতি চলছিল। গোটা দেশজুড়ে ভগৎ, চন্দ্রশেখর আজাদ, আশফাকউল্লাদের স্বপ্ন সফল করার লড়াই চলছে। আজকাল খুব দেশদ্রোহী শব্দটা শুনি। আমার হাসি পায়। ভগৎদেরও দেশদ্রোহী বলত ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু ইতিহাস তাঁদের প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে। অন্ধকার রাত্রি শেষ কথা বলে না, নতুন সূর্য আসবেই। এই আশাবাদকে শক্তি জোগায় ভগৎ সিংয়ের জীবন।

নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:

 প্রিয় পাঠক,
      আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.