রাত পোহালেই স্বাধীনতা দিবস। স্বর্ণ নয়, রৌপ্য নয়, একেবারে হীরক জয়ন্তীর সূচনা। স্বাধীনতা মানে প্রথমত অধিকার। স্বাধীন ভারতের সংবিধানে নাগরিকদের যতগুলো মৌলিক অধিকার স্বীকার করা হয়েছে তার মধ্যে একটা হল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার। এই অধিকারের মধ্যে কী কী পড়ে তা বলা আছে সংবিধানের ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে। সেই অনুচ্ছেদের (১)(ডি) বলছে অন্যতম অধিকার হল “to move freely throughout the territory of India”। অর্থাৎ ভারতের সীমানার মধ্যে স্বাধীনভাবে চলে ফিরে বেড়ানোর অধিকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে তর্কাতর্কি গত কয়েক বছরে এক মুহূর্তের জন্যও থামেনি সঙ্গত কারণেই। কিন্তু কবিতা লেখার অধিকার, ব্যঙ্গ করার অধিকার, সভা সমিতি করার অধিকার নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে তার এক শতাংশও স্বাধীনভাবে চলে ফিরে বেড়ানোর অধিকার নিয়ে হয়নি। অথচ ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ এই অধিকারটাই হারিয়েছেন।
এ কথা ঠিক যে পৃথিবীর সব দেশেই বিশেষ প্রয়োজনে নাগরিক অধিকার খর্ব করা হয়, সংবিধানেই তার বিধান থাকে। প্রয়োজনটা যদি কোরোনা অতিমারির মত হয়, তাহলে বলা চলে অধিকার খর্ব করা হয়েছে নাগরিকেরই কল্যাণার্থে। পৃথিবীর সব দেশে একসময় লকডাউন হয়েছে, ভারতেও হয়েছে। সব দেশের নাগরিকের চলা ফেরা করার অধিকারই খর্ব করা হয়েছে, এ দেশের নাগরিকরাই বা ব্যতিক্রম হবেন কেন? সেই সময়ে লকডাউনের বিকল্প কিছু ছিল কিনা তা প্রকৃতপক্ষে ডাক্তার, ভাইরোলজিস্ট, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয়। কিন্তু দেড় বছর হতে চলল, সকলের চলে ফিরে বেড়ানোর সম্পূর্ণ অধিকার কেন ফেরত এল না, তা নিয়ে ঝড় ওঠা উচিত। উঠছে না কারণ ঝড় তুলতে পারেন যাঁরা, জনপরিসরে আলোচনার বিষয়গুলো আসলে নির্ধারিত হয় যাঁদের মর্জিতে, তাঁরা চলে ফিরে বেড়ানোর অধিকারের গুরুত্ব উপলব্ধি করছেন না। ওই অধিকারটা না থাকলে যে কাজের অধিকার থাকে না, এমনকি বেঁচে থাকার অধিকারটাও অবলুপ্ত হয় — তা বোঝার মত দুর্গতি তাঁদের হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে লোকাল ট্রেন পুরো দমে না চললে অসুবিধা কোথায়, তা তিনি বুঝবেন না, যাঁর নিজের গাড়ি আছে। তিনি দিব্যি অফিস যাচ্ছেন, অসুবিধা বলতে বাড়তি যানজট, আর পেট্রোলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় পকেটের উপর বাড়তি চাপ। তিনি সেই বাদাম বিক্রেতাকে চেনেন না, যার সংসার চলত তারকেশ্বর-হাওড়া লোকাল ট্রেনে বাদাম, ছোলা, মটর বিক্রি করে। চলছে না বলে কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়েই আত্মহত্যা করেছেন। ল্যাপটপ আর বাড়িতে ওয়াই-ফাই কানেকশন থাকলেই আমার অর্থ উপার্জন হয়, মাসের শেষে প্রাপ্য টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। আমাকে রোজ কোন্নগর থেকে কলকাতা যেতে হয় না। হাতের মোবাইলের মাধ্যমে কলকাতা বা ক্যানকুন — যেখানে ইচ্ছা পৌঁছে যেতে পারি এক নিমেষে। আমি কী করেই বা বুঝব বড়বাজারের শাড়ির দোকানে হাজার পনেরো টাকা মাইনেয় কাজ করা প্রতিবেশীর নিত্যযাত্রা কি অসহনীয় হয়ে উঠেছে শহরতলির ট্রেন না থাকায়? মুশকিল হল, কেন্দ্র আর রাজ্য — দুই সরকারই আমার সরকার, আমি তাদের রাজনৈতিক বিরোধী হলেও। আর দুটোর কোনোটাই সেই বাদাম বিক্রেতার সরকার নয়, আমার প্রতিবেশীর সরকারও নয়। তাঁরা বিজেপি এবং তৃণমূলকে ভোট দিয়ে থাকলেও নয়। অতএব রাজ্যসভার অধিবেশন থেকে বিরোধীদের মার্শালের বাহুবল প্রয়োগ করে বহিষ্কার করা ভুল নয় — অন্তত এই মিথ্যাটুকু কেন্দ্রীয় সরকারকে বলতে হয়। লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখা অন্যায় নয় — রাজ্য সরকারকে এ কথা প্রমাণ করতে হয় না।
নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পাশে দাঁড়ান

আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। স্বাধীন মিডিয়া সজীব গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কথাগুলো বলা আবশ্যক এবং যে প্রশ্নগুলো তুলতে হবে, তার জন্যে আমরা আমাদের পাঠকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
নাগরিক ডট নেটে সাবস্ক্রাইব করুন
~ ধন্যবাদান্তে টিম নাগরিক।
সরকারগুলো অমানবিক, সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না — শুধু এটুকু বিপদ নয়। বিপদ আরও বড় এই জন্যে, যে বিরোধীরাও যে ১৯(১)(ডি) লঙ্ঘন নিয়ে বিশেষ ভাবিত নন। কোনো বিরোধী নেতার মুখে শোনা গেছে কথাটা? পরপর কয়েকদিন শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে সাধারণ মানুষ স্টাফ স্পেশালে উঠতে দেওয়ার দাবিতে রেল অবরোধ করেছেন, টিভিতে দেখানো হয়েছে, কাগজে ছাপা হয়েছে। তারপর বিধিনিষেধের মেয়াদ ফুরোবার দিন এগিয়ে এলে মুখ্যমন্ত্রী বা কোনো উচ্চপদস্থ আধিকারিক যথারীতি জানিয়ে দিয়েছেন অমুক তারিখ পর্যন্ত লোকাল ট্রেন বন্ধই থাকবে, কেবল স্টাফ স্পেশাল চলবে। কারণ লোকাল ট্রেন চালু হলেই সংক্রমণ মাত্রা ছাড়াবে। এর প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের কোনো বিরোধী দল রাজ্যব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলেছে? কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে সারা রাজ্যে রেল রোকো হয়েছে? স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধগুলোর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সাউন্ড বাইট ছাড়া আর কিছু পাওয়া গেছে কোনো দলের নেতৃবৃন্দের থেকে?
লক্ষ্মী ছেলের মত নতুন বিধিনিষেধের তালিকা প্রকাশ করা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমও বিশেষ কিছু করেনি। সঙ্গে অবধারিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে এই মুহূর্তে কত জোড়া লোকাল ট্রেন চলছে তার ফিরিস্তি। টিভির পর্দায় দেখানো হয়েছে ট্রেন, বাসের বাদুড় ঝোলা ছবি। যিনি রোজ বেরোচ্ছেন না, কর্মক্ষেত্রে যেতে গিয়ে স্বাভাবিকের দ্বিগুণ ভাড়া গুনছেন না, স্টাফ স্পেশালে উঠে জরিমানা গুনছেন না — তিনি স্বভাবতই ভাববেন ট্রেনও চলছে, লোকেও চড়ছে। বরং লোকে কোনো বিধিনিষেধ না মেনে যাতায়াত করছে দেখে উষ্মা প্রকাশ করবেন।
দুঁদে সাংবাদিকদের দিন গিয়েছে। সে আমল হলে হয়ত এতদিনে একটা তদন্তমূলক প্রতিবেদন বেরোত — ট্রেন বন্ধ থাকায় পেট্রোল, ডিজেল বেশি বিক্রি হওয়ার ফলে রাজস্ব খাতে রাজ্য সরকারের কতটা মুনাফা হচ্ছে। অথবা জরিমানা আদায় করে কতখানি লাভবান হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন রেল। আশ্চর্যের কথা, মুখ্যমন্ত্রীর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার প্রতিভা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ঝানু সম্পাদকরাও আমাদের জানাতে পারছেন না, ট্রেন কমিয়ে ভিড় বাড়ালে সংক্রমণ কমবে — একাধারে সমাজবিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিজ্ঞানের এই অসামান্য সূত্রটি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের আবিষ্কার, নাকি তাঁর কোনো অপরিহার্য অফিসারের মস্তিষ্কপ্রসূত।
নাগরিক অধিকারের কথা থাক। যে সংবাদমাধ্যমকে নিজের পিঠ বাঁচাতে হয়, সে আর নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন তুলবে কী করে? কিন্তু সরকারের ভালর জন্যও তো এইসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা দরকার। আমরা তো গত তিরিশ বছরে শিখেই গেছি, সরকার যদি কোনোভাবে আয় বাড়াতে পারে, তার চেয়ে বড় সুখবর কিছু নেই। সরকার চালানো আর ব্যবসা চালানোর মধ্যে তেমন কোনো তফাত নেই। দুটো কাজেই ঠিক তা-ই করা উচিত যাতে আয় হয়, মুনাফা বাড়ে। তা যদি জানা যায় অল্প ট্রেন চালালে সরকারের আয় বাড়ছে, তাতে আপত্তি করার মত আহাম্মক কে আছে ভূভারতে?
লোকাল ট্রেন তো তবু মাঝে পুরো মাত্রায় চালু হয়েছিল, গত দেড় বছর যে টানা স্কুল-কলেজ বন্ধ, তাতে কি কেউ আপত্তি করেছে? যারা অনলাইন ক্লাস করছে, তাদের তো লেখাপড়া দিব্যি চলছে। যারা করতে পারছে না, তারা পরের ছেলে পরমানন্দ। যত গোল্লায় যায় তত আনন্দ। কিছু মাস্টারমশাই, দিদিমণি, শিক্ষাবিদ কিছুদিন হল বারবার বলে চলেছেন অবিলম্বে স্কুল খোলা দরকার। গ্রামাঞ্চলে ড্রপ আউট চড়চড় করে বাড়ছে, গরীব পরিবারের পড়ুয়া মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? মাস্টাররা বসে বসে মাইনে পায়, কোনো কাজ করে না, কিচ্ছু জানে না — এই সিদ্ধান্ত বহুদিন আগেই হয়ে গিয়েছিল। অতএব এদের কথা শুনে হবেটা কী? স্কুল কলেজ থাক তালাচাবি বন্ধ। মাঝে মাঝে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে যেতে বলো, ওঁরা সরকারের শ্রীবৃদ্ধির কাজগুলো করে আসুন, তাহলেই যথেষ্ট। ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনলাইন ক্লাস করার সামর্থ ইউরোপের ছেলেমেয়েদের অনেক বেশি, পরিকাঠামোও নিঃসন্দেহে অনেক ভাল। অথচ সেখানে স্কুল খুলেছে। কোথাও কোথাও প্রয়োজন হলে ফের বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্কুল খুলেছে, ছেলেমেয়েরা স্কুলে গেছে। গ্রেট ব্রিটেনে স্কুল খুলেছে এ বছর মার্চ মাসে, ফ্রান্সে মে মাসে। অথচ পৃথিবীর বৃহত্তম সংসদীয় গণতন্ত্রে শোনা যাচ্ছে অক্টোবরে স্কুল খুলবে। ইতিমধ্যে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের ভ্রুকুটি। দ্বিতীয় ঢেউয়ে অক্সিজেনের অভাবে যে কারো মৃত্যু ঘটেনি সে কথা সরকার জানিয়েছে, কিন্তু ইতিমধ্যে হাসপাতালের সংখ্যা বা ভেন্টিলেটরের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে কিনা জানায়নি। সুতরাং তৃতীয় ঢেউ থেকে নাগরিকদের বাঁচাতে হয়ত আবার বের করা হবে লকডাউন নামক কুমিরছানা। স্কুল, কলেজ আবার চলে যাবে বিশ বাঁও জলে।
এই সমস্যার ক্ষেত্রেও কেবল সরকারী ঔদাসীন্য সমস্যা নয়। স্কুল, কলেজ খোলার দাবিতে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন পথে নেমেছে সবে মাত্র। এতদিন কোথায় ছিলেন? অন্যদের কথা না বলাই ভাল। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের এসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানোর বোধহয় সময় নেই, ওঁরা দেশ চালাতে ব্যস্ত।
স্কুল কি তবে আর খুলবে না? লোকাল ট্রেন কি তবে পুরো শক্তিতে আর চলবে না? তা কেন? মুখ্যমন্ত্রী কাউকে নিরাশ করেন না। স্কুল, কলেজ যেমন পুজোর পর খুলতে পারে বলে আশা দিয়েছেন; তেমনি কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগণা, হুগলী আর বীরভূমের অর্ধেক মানুষের টীকাকরণ হয়ে গেলেই সকলের জন্য লোকাল ট্রেন চলবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ২০১১ জনগণনার ভিত্তিতে অনুমান করা যায়, এখন এই জেলাগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা চার কোটির আশেপাশে [১]। মুখ্যমন্ত্রী অর্ধেক মানুষ বলতে শিশুদেরও বুঝিয়েছেন কিনা জানা নেই, শিশুদের টীকাকরণ কবে থেকে চালু হবে, তার অপ্রতুলতা বড়দের টীকার চেয়ে বেশি হবে না কম হবে দেবা ন জানন্তি। সব মিলিয়ে তাঁর কথার অর্থ দাঁড়ায় এই ছটা জেলার অন্তত দু কোটি মানুষ দু ডোজ ভ্যাক্সিন পেলে তবে লোকাল ট্রেনের চলাচল স্বাভাবিক হবে[২]। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ এ পর্যন্ত ভ্যাক্সিনের দুটো ডোজই পেয়েছেন। তাহলে মুখ্যমন্ত্রী কথিত ছটা জেলার এতগুলো মানুষের দুটো ডোজই পেতে কতদিন লাগবে? হিং টিং ছট প্রশ্ন এসব মাথার মধ্যে কামড়ায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ফ্যাসিবাদ না থাকলেও, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও সাংবাদিক সম্মেলনে জিজ্ঞেস করা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেছেন তিনি চেষ্টা করবেন যেন টীকাকরণের গতি বাড়ে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো ভাল করেই জানেন দেশে ভ্যাক্সিনের অপ্রতুলতার কথা। তিনি নিজেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোকে বেশি ভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত। [৩]তাহলে ট্রেন চালু করার জন্য এই প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা কেন? বিশেষত নিজেই যখন বারবার বলছেন রাজ্যে সংক্রমণ এখন কম?
আসলে সবটাই অব্যবস্থা ঢাকার নিষ্ফল প্রয়াস নয় কি? পৃথিবীর যেসব দেশে স্কুল, কলেজ খুলেছে বা সাধারণ জনপরিবহণ খুলে গেছে, সেই দেশগুলো আসলে যথাসময়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক নাগরিকের টীকাকরণ করেছে। ফলে অতিমারীর বিপদ নিয়ন্ত্রণে এনে তবেই জনজীবন স্বাভাবিক করা হয়েছে। ভারতে সে ব্যবস্থাই করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন কোনো সদিচ্ছাই দেখা যায়নি। ২০২১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকলে ভ্যাক্সিন পেয়ে যাবে — এই প্রতিশ্রুতি যে পূরণ হবার নয়, তা নরেন্দ্র মোদীও জানেন। পূরণ করা উদ্দেশ্যও নয়। কারণ তাহলে সত্যিই বিনামূল্যে বহু মানুষকে টীকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু ওই যে, সরকার আমার। মানে আমার মত যারা কয়েকশো টাকা খরচ করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভ্যাক্সিন নিতে পারে। আমার বাড়ির পরিচারিকার মত যাঁরা পারেন না, তাঁদের অনন্তকাল অপেক্ষা করতে হবে। মানতেই হবে এই ব্যবস্থায় তেমন কিছু করার ক্ষমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য সরকার মোট উৎপাদিত ভ্যাক্সিনের মাত্র ২৫% সরাসরি কিনতে পারে [৪]। কিন্তু তাহলে সাত পাঁচ না ভেবে এ বছর জানুয়ারি মাসে সকলকে বিনামূল্যে টীকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কেন [৫]? ওই ঘোষণার পিছনে তাহলে নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার ছিল গৌণ, জুমলার খেলায় সমানে সমানে টক্কর দেওয়াই ছিল আসল কথা?
স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তীর আরম্ভে দাঁড়িয়ে আসলে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের অধিকারের ধারণাগুলোই গুলিয়ে গেছে। নইলে যে দেশের শিশুরা জন্মেই বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন পাওয়ার অলিখিত অধিকার পেত, সে দেশে বিনামূল্যে ভ্যাক্সিন দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হয়ে ওঠে কী করে?
অধিকারবোধ হারিয়েও কি স্বাধীন থাকা যায়?
তথ্যসূত্র:
১। https://www.indiacensus.net/states/west-bengal
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ উপলক্ষে নাগরিক ডট নেটের বিশেষ সংখ্যার লেখাগুলো (স্বাধীনতা ৭৫):
- সুভাষচন্দ্রের হাতে ৪৮ লক্ষ টাকার সম্পদ তুলে দিয়েছিল যে বাঙালি পরিবার
- হারানো অধিকারবোধ ও আমাদের স্বাধীনতা
- বিপ্লবীদের চারণভূমি মেদিনীপুর
- যে কিশোরের মরণ নেই
- মুক্তির মন্দির আর বিপ্লবতীর্থ চন্দননগর
নাগরিকের পক্ষ থেকে আবেদন:
আপনাদের সাহায্য আমাদের বিশেষভাবে প্রয়োজন। নাগরিক ডট নেটের সমস্ত লেখা নিয়মিত পড়তে আমাদের গ্রাহক হোন।
আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করুন।
টুইটারে আমাদের ফলো করুন।
আমাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিন।